শীতে জবুথবু মেদিনীপুর। গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙে ৭ ডিগ্রিতে নেমে গেল তাপমাত্রার পারদ। শুক্রবার রাতে তাপমাত্রা এতটা নেমে যায়। এটাই ছিল চলতি মরসুমের শীতলতম দিন। তাপমাত্রার পারদ আরও কিছুটা নামতে পারে। এ বার ডিসেম্বরের গোড়া থেকে ঝিমিয়ে ছিল শীত। মাঝে মধ্যে একটু গা-ঝাড়া দিলেও তা স্থায়ী হয়নি। তবে জানুয়ারির গোড়া থেকে শীতের ঝোড়ো ইনিংস শুরু হয়েছে। প্রায় দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৮-১০ ডিগ্রির মধ্যে।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের মেটিওরোলজি পার্ক সূত্রে খবর, শুক্রবার মেদিনীপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ ডিগ্রি। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি। মেদিনীপুরের শীতলতম দিন দেখার কথা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। নতুন রেকর্ডের কথাও মানছেন তিনি। ওই শিক্ষকের কথায়, “শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি ছিল। চলতি মরসুমে এর আগে কখনও তাপমাত্রা এতটা নামেনি।” তাঁর সংযোজন, “এটা নতুন রেকর্ড। মেদিনীপুরের এই পার্কের থার্মোমিটারে এর আগে তাপমাত্রা নেমে ৭.৫ হয়েছিল। একদিন আগেই এটা হয়। এর নীচে কখনও তাপমাত্রা এতটা নামেনি।।” শীত শুধু জাঁকিয়ে বসেছে তা নয়, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকছে। বাতাসের গতিবেগও কিছুটা কম। বস্তুত, মেদিনীপুরে কয়েক দিন ধরেই ঝোড়ো ব্যাটিং চালাচ্ছে শীত। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া কামড় দিচ্ছে। সেই কামড়েই রেকর্ড ভেঙে মেদিনীপুরে ৭ ডিগ্রি হয়েছে। বিকেলের পরে তরতর করে তাপমাত্রা নামতে শুরু করছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে মেদিনীপুরে শীতলতম বলে চিহ্নিত ছিল ২০১৬ সাল।
কেমন? বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটিওরোলজি পার্ক সূত্রে খবর, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিকে শীতের এমন ঝোড়ো ব্যাটিং ছিল। ওই সময়ও শীতে কেঁপেছে মেদিনীপুর। একদিন তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি হয়ে যায়। ওটাই ছিল ওই মরসুমে মেদিনীপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এখন তাপমাত্রা যেখানে ঘোরাফেরা করছে, তাতে জাঁকানো শীতটা আরও কিছুদিন থাকবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
ক্রমশ মেদিনীপুরের তাপমাত্রা নামায় শৈতপ্রবাহের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। আবহবিদেরা জানান, সাধারণত শীতকালে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি নামলেই বলা হয়, শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আচমকা পারদ পতনের ফলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গাড় কুয়াশা তৈরি করছে। শুক্রবার সন্ধের পরে মেদিনীপুরের সদাব্যস্ত রাস্তাও ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। সুনসান হয়ে যায় পাড়ার মোড়ও।
অনেকের মতে, তাপমাত্রা যত না কমছে তার থেকে যেন বেশি শীতের অনুভূতি লাগছে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তুরে হাওয়ার ঝাপটার ফলেই শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। ফেসবুকে কেউ কেউ রসিকতা করে লিখেছেন, ‘এ তো শুধু শীত নয়, শীতের সাইক্লোন!’