সম্মানিত: সংবর্ধনা পাওয়ার পর চার গরবিনী। নিজস্ব চিত্র
সাফল্যের মুখ দেখেছেন ছেলে। কিন্তু তাঁর পিছনে যাঁর অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি, তাঁকে মঞ্চে ডেকে এনে সংবর্ধনা দেওয়ার বিরল উদাহরণ তৈরি করল মেদিনীপুরের বণিকসভা।
ম়ঞ্চে দাঁড়িয়ে মা বললেন, ‘‘সেই কবে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে সংসার আর সন্তান নিয়েই রয়েছি। নিজের পরিচয়টা ভুলতেই বসেছিলাম। কিন্তু ছেলের জন্মের পর থেকেই ওর কানে কানে বলে এসেছি, ‘তোর পরিচয়ই আমার পরিচয়’। আজ সেটা সত্যি হল। এ এক অন্য রকম ভাল লাগা।’’
মেদিনীপুরেরই বাসিন্দা করবী বিশ্বাসের কথা শুনে তখন হাততালি দিচ্ছেন প্রেক্ষাগৃহের দর্শকেরা। কারও কারও চোখে জল। এমন কত মা-ই তো তাঁদের জীবনের সেরা সময়টা ব্যয় করে দেন সন্তানের জন্য। ক’জনই বা এমন স্বীকৃতি পান। করবীদেবীর ছেলে মেডিক্যাল জয়েন্টে ১৬ নম্বর র্যাঙ্ক পেয়েছিলেন গত বছর। এখন তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করছেন।
ছেলের সাফল্যে মায়ের ভূমিকা যে কতখানি ভোলেনি কনফেডারেশন অব ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট মিদনাপুর ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। বুধবার নারী দিবসে পাঁচ জন মহিলাকে সংবর্ধিত করল সংগঠনের মেদিনীপুর ইউনিটের মহিলা শাখার সদস্যরা।
করবীদেবী ছাড়াও সংবর্ধনা দেওয়া হয় শহরের উদ্যোগপতি মাধবী সাহা মণ্ডলকে। তাঁর আসবাবপত্রের দোকান রয়েছে। নিজের কারখানায় তৈরি হয় নানা ধরনের আসবাব। সে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স-সহ একাধিক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সাগরিকা ঘোষ, এশিয়াটিক সোসাইটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো। রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে গবেষণাও করেছেন। এখন মেদিনীপুর কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ দিন তাঁকেও সংবর্ধনা দেয় বণিক সভা। ফ্যাশন ডিজাইনার দেবযানী ঘোষ ও ব্যবসায়ী কেকা সিংহও সংবর্ধিত হন।
এ দিন সন্ধ্যায় মেদিনীপুর স্টেশন রোডে এক প্রেক্ষাগৃহে ‘সম্মানিত নারী’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তারাও নারী। বণিকসভার মেদিনীপুর ইউনিটের মহিলা শাখার সভাপতি কান্তা বসু বলেন, “কৃতী নারীদের সম্মানিত করতে পেরে আমাদের নিজেদেরই ভাল লাগছে। আশা করি, আগামী দিনে ওঁরা আরও এগোবেন। মেদিনীপুরের মুখ
উজ্জ্বল করবেন।’’
এমন একটা দিনে সংবর্ধিত হয়ে আপ্লুত সাগরিকা ঘোষ, দেবযানী ঘোষরা। এঁদের কথায়, “সত্যিই এটা একটা আলাদা অনুভূতি। অন্য রকম ব্যাপার। অন্য স্বীকৃতি। এই সন্মান পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’’ মাধবীদেবী বলেন, ‘‘এই সম্মান আগামী দিনে আরও ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহ দেবে।’’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে অনেকখানি। অনেক মহিলাই স্বনির্ভরতার পথ খুঁজে নিয়েছেন। বণিকসভার কর্তারাও মানছেন, শুধু পুঁজিই নয়, উদ্যোগপতি হতে হলে উদ্ভাবনী শক্তিও জরুরি। সে জন্যই মেয়েরা সামাজিক মর্যাদায়, আর্থিক স্বনির্ভরতায়
পৌঁছতে পারছেন।