রাস্তায় পড়ে ইমারতি সামগ্রী। ক্ষীরপাইয়ে। — কৌশিক সাঁতরা।
রাস্তার ধারে ছোট্ট দোকান। সেখানে শুধু টাকা পয়সার হিসাব নিকাশ চলে। বাকিটা রাস্তার উপরেই। ঘাটালের বেশিরভাগ রাস্তায় এ ছবিটা খুবই পরিচিত।
প্রশাসনের নাকের ডগায় রাস্তার ধারে ইট-বালি-সুরকি ফেলে রেখে দিব্যি চলছে ইমারতি ব্যবসা। কিন্তু হেলদোল নেই পুলিশ-প্রশাসনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাসক বা বিরোধী, রাজনৈতিক নেতারাও এই বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতে চান না। ইদানীং আবার এই তালিকায় যোগ হয়েছে কাঠের ব্যবসাও।
এ দিকে প্রতিদিন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। সেই অনুপাতে চওড়া হয়নি রাস্তা। কিন্তু রেল যোগাযোগ না-থাকায় এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসা বাস-রাস্তা। সে রাস্তাও হয়ে যাচ্ছে বেদখল। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুব্ধ ঘাটালবাসী।
সমস্যা দীর্ঘদিনের। ঘাটাল-পাঁশকুড়া, ঘাটাল-চন্দ্রকোনা, ক্ষীরপাই-আরামবাগ, গোপীগঞ্জ-সুলতাননগর-সহ বিভিন্ন সড়কের দু’ধারে ইঁট, বালি, পাথর রেখে ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এর ফলে প্রতিদিন বাড়ছে দুঘর্টনা। পুলিশের তথ্য বলছে, ঘাটাল মহকুমায় বিভিন্ন রাস্তায় স্রেফ বালি পড়ে থাকার জন্যই গত ছ’মাসে মাসে প্রায় ৬০টি মোটর বাইক-সহ অনান্য গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে ঘাটাল শহরেই হয়েছে ১২ টি দুর্ঘটনা।
ঘাটাল শহরের আড়গোড়ার বাসিন্দা তুফান সরকার বলেন, ‘‘একেই তো কালেভদ্রে সংস্কার হয় রাস্তা। তার উপর এই অসাধু ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা রাস্তা থেকেই ওই সব সরঞ্জাম খদ্দেরদের বিক্রিও করছেন। প্রশাসন দেখেও কিছু বলে না।’’ প্রতিদিনের ছবিটা ঠিক এরকমই। যাতায়াতের পথেই চোখে পড়বে বালি থেকে কাঁকর বেছে নেওয়ার জন্যে রাস্তাতেই চলে বালি চালার কাজও।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা সুজিত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের যোগসাজস না-থাকলে এ ভাবে ব্যবসা চালানো সম্ভবই নয়। আঁতাত রয়েছে শাসক দল-সহ অনান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও। না হলে এ ভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠতে পারে না ব্যবসা।’’ বাসিন্দারা বলছেন, এই সমস্যা নতুন নয়। ঘাটাল মহকুমায় তিনটি বিধানসভা ভোট হয়ে গেল। কোনটিতেই ইস্যু হয়নি এই সমস্যা। কোনও রাজনৈতিক দল একটি কথাও বলেন না।
পুলিশ আবার বলছে, দুঘর্টনা ঘটলেই সাধারণ মানুষ পথ অবরোধ শুরু করেন। আর ওই অবরোধ তুলতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। গত বছর এই ট্র্যাডিশন বন্ধ করতে ঘাটাল পুলিশ এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তারপর বেশ কিছুদিন রাস্তার ধারে ইট-বালি ফেলা বন্ধ ছিল। কিন্তু বেশিদিন নয়। ফের শুরু হয়েছে একই পদ্ধতিতে ব্যবসা।
ইদানীং ঘাটাল-চন্দ্রকোনা রোড এবং একাধিক বাইপাসে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে কাঠ মিলগুলি নিয়ে। বিভিন্ন কাঠ মিলের মালিকরা রাস্তার ধারে বড় বড় গাছের গুঁড়িও ফেলে রাখতে শুরু করেছেন। মাসের পর মাস সরকারি ওই জমি দখল করে কাঠ চেরাইয়ের কাজ চলছে।
এ ব্যপারে অবশ্য নির্বিকার প্রশাসন। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভোটের কাজে ব্যাস্ত ছিলাম। এ বার অভিযান চালাব।” পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিএসপি (ক্রাইম) পরাগ ঘোষের কথায়, “মাঝে মধ্যেই অভিযান চলে। পুলিশি ধড়পাকড়ের সময় কিছুদিন বন্ধ থাকে। মামলাও করা হয়েছে।’’ তিনিও আশ্বাস দেন ফের অভিযান শুরু হবে। ঘাটালের বিদায়ী বিধায়ক তৃণমূলের শঙ্কর দোলই বলেন, “ঘাটালে এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা নজর রাখছি।” আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরার দাবি করেছেন, “পুলিশকে দলের তরফে একাধিক বার বলাও হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।”