আর কতদিন বাঘের ডর, প্রশ্ন জঙ্গলমহলে

ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলে লাল মোরাম মাটিতে গরম বেশি। সেই কারণে বাঘটি এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না। পছন্দসই জায়গা খোঁজার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে বাঘটি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লালগড় শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:০৮
Share:

প্রণাম: মৃত কর্মীকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বন আধিকারিক। নিজস্ব চিত্র

প্রথমে পায়ের ছাপ। পরে জঙ্গলে চরতে গিয়ে গরু, বাছুরের রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরে আসা। এরই মধ্যে একজন দাবি করলেন, তাঁকে নাকি কামড়েছে সে। ক্রমশ বাড়ছিল বাঘ-আতঙ্ক। এ বার সেই বাঘ ধরতে গিয়েই বেঘোরে প্রাণ হারালেন দু’জন। স্বাভাবিক ভাবেই ভয়ের পাশাপাশি এ বার ছড়াচ্ছে ক্ষোভ। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, বাঘ যদি জঙ্গলে থাকে তাহলে ধরা পড়ছে না কেন?

Advertisement

শেষ ফাল্গুনে এলাকার শাল জঙ্গলে গাছের পাতা ঝরে গিয়ে নতুন কচি পাতা গজিয়েছে। ফলে জঙ্গলের ভিতরে সরলরেখা বরাবর ‘দৃশ্যমানতা’ এখন অনেকটা স্পষ্ট। শাল গাছের মূল কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা অনেকটাই উপরে থাকে। এই সময় চিরাচরিত অভ্যাসবশত শুকনো পাতায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা হামেশাই ঘটে। ফলে জঙ্গলের ভিতরে ঝোপঝাড় সাফ হয়ে গিয়ে চারপাশ বেশ স্পষ্টই দেখা যায়। তাহলে কেন দেখা মিলছে না বাঘ বাবাজির? লালগড়ের প্রবীণা খাঁদি চালকের প্রশ্ন, “আগে এলাকায় অনেক ঘন জঙ্গল ছিল। এখন তো জঙ্গল সাফ করেই লোকালয়, চাষের জমি হয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন বন দফতর বাঘ ধরতে পারছে না?” বাঘ ধরতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না বন দফতর। ফাঁদ ক্যামেরা, খাঁচা তো ছিলই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ড্রোনের সাহায্যেও লাগাতার তল্লাশি চলেছে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, যদি না বাঘকে ধরা য়ায় তাহলে এত আয়োজনে লাভ কী! তার উপর বাঘ ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আতঙ্ক তো ছিলই, এ বার ছড়াচ্ছে ক্ষোভও। মেলখেড়িয়ার নির্মলা মাহাতো বলেন, “আর কতদিন এ ভাবে চলবে বলতে পারেন! ১৫-২০ দিন ধরে আতঙ্কের দিনরাত কাটাচ্ছি। গরু ছাগল গোয়ালেই বাঁধা থাকছে।” বাঘের ভয়ে ক্ষতি হচ্ছে চাষাবাদেরও। ছোটপেলিয়ার সুরেন্দ্রনাথ হাঁসদা, কুমারবাঁধের কাঁদন সরেন বলছেন, “এখন বোরো চাষের মরশুম। করলা চাষও হয় এ সময়। বেশি ক্ষণ মাঠে থাকা যাচ্ছে না।” বাঘের আতঙ্ক নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে লালগড় ও গোয়ালতোড়ের জঙ্গল এলাকার পরীক্ষার্থীরা। স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত। বাঘটিকে কী আদৌ ধরা যাবে? নাকি, বছর দু’য়েক আগে বেলপাহাড়ির মেছুয়া এলাকার ‘হানাদার’ বাঘের মতো মেলখেড়িয়াতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে অধরাই থেকে যাবে ডোরাকাটা!

বন দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, সম্ভবত বাঘটি ওডিশার সিমলিপাল অথবা ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে এসেছে। তেমন হলে ওই দু’টি এলাকায় পাহাড়ি আর্দ্র জায়গা রয়েছে। যা গরমে বাঘের বিশ্রামের পক্ষে উপযোগী। কিন্তু ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলে লাল মোরাম মাটিতে গরম বেশি। সেই কারণে বাঘটি এক জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না। পছন্দসই জায়গা খোঁজার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল জুড়ে বাঘটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় যাওয়ার প্রবণতাও তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকায় ছ়ড়াচ্ছে আতঙ্ক। ঘটছে নানাবিধ কাণ্ড। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন একটাই।

Advertisement

এর শেষ কোথায়!

আরও পড়ুন: নিশ্ছিদ্র গাড়িও মরণফাঁদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন