Suvendu Adhikari

আমরা মর্মাহত! এই শুভেন্দুকে চিনি না, আক্ষেপ আবু তাহেরের

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৫০
Share:

সে দিন। এভাবেই এক মঞ্চে দেখা যেত শুভেন্দু অধিকারী ও আবু তাহেরকে।

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। তার পর থেকে টানা প্রায় দেড় দশকের রাজনৈতিক পথে দু’জনের সম্পর্কে কখনও চিড় ধরেনি। এমনকি শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি ছাড়ার আগে পর্যন্তও একমঞ্চে থাকতেন আবু তাহের। সেই আবুই বলছেন, শুভেন্দুর কর্মকাণ্ডে তিনি ‘মর্মাহত’। আক্ষেপের সঙ্গে বলছেন, ‘‘এমন শুভেন্দুকে আমরা চিনি না।’’

Advertisement

কেন এমন কথা বলছেন তাহের? শুভেন্দু দলবদলের পর গত ২৯ ডিসেম্বর নন্দীগ্রামে বজরং পুজোর আয়োজন করেছিলেন। সেখানে আসার পথে নন্দীগ্রামে ভূতার মোড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সেই ঘটনায় ক্ষিপ্ত শুভেন্দু বলেছিলেন, “ওখানে জেহাদিরা হামলা চালিয়েছে।’’ নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দুর এই বক্তব্যেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন আবু। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ কখনওই জাতি, ধর্ম, বর্ণ মানে না। জমি আন্দোলনে ভরত, সেলিম, বিশ্বজিৎরা একসঙ্গে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন। এখানে কেউ আইনবিরুদ্ধ কাজ করলে তাঁকে দুষ্কৃতী বলা যেতে পারে, কিন্তু জেহাদি কখনওই নয়।’’

শুভেন্দু-আবু রাজনৈতিক বন্ধুত্বের সূত্রপাত ২০০৬ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় থেকে। এলাকায় কট্টর সিপিএম-বিরোধী বলে পরিচিত আবু স্থানীয়দের নিয়ে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী মঞ্চ গড়ে আন্দোলন শুরু করেছেন। পরে যার নাম হয়েছিল ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’। সেই কমিটির কার্যক্রমে শুভেন্দু যোগ দেওয়ার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। বাকিটা ইতিহাস। নন্দীগ্রামের বড় গন্ডগোলের সূত্রপাত হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩ জানুয়ারি। ওই দিন ভূতার মোড়ে গোলাগুলি চলে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ি। ওই দিনও শুভেন্দু-আবুর একসঙ্গে সভা করার কথা ছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: শতাব্দীকে নিয়ে অভিষেকের অফিসে কুণাল, সাংসদের মান ভাঙাতে বৈঠক

উত্তাল নন্দীগ্রাম অধ্যায় পেরিয়ে রাজ্যে বাম শাসনের অবসান, তৃণমূলের ১০ বছরের শাসনকাল— এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কখনও দু’জনের মধ্যে কখনও দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়নি। কাঁথির অধিকারী বাড়িতে আবুর ছিল অবাধ যাতায়াত। কিন্তু শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়ার পর থেকে আর যোগাযোগ নেই। আবুর কথায়, ‘‘এই শুভেন্দুদা-কে আমরা চিনি না। বিভিন্ন সভা সমিতিতে তিনি যেভাবে ‘জেহাদি’ শব্দটি ব্যবহার করছেন, তাতে আমরা মর্মাহত। দল বদলেই উনি এ ভাবে জাতি-বিভাজনের রাজনীতি শুরু করবেন, তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

দল ছাড়ার আগের দিন পর্যন্তও শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জানিয়ে আবু বলেন, ‘‘বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে হলদিয়ায় বৈঠকে বসেছিলেন শুভেন্দুদা। সেখানেই তিনি দল ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে এও জানিয়েছিলেন, কেউ চাইলে তাঁর সঙ্গে দল বদল করতে পারেন আর না চাইলে দরকার নেই। উনি কথা দিয়েছিলেন, যাই হোক না কেন, কেউ পুরনো সম্পর্ক ভুলবেন না। কারও সম্পর্কে কুৎসা করবেন না, এই কথাও দিয়েছিলেন।’’

আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে বিতর্ক, টুইট-যুদ্ধে অবিরত যুযুধান সায়নী-তথাগত

ব্যক্তিগত ভাবে অবশ্য আবু বা স্থানীয় কারও বিরুদ্ধে আক্রমণ করেননি। তবে এই জেহাদি শব্দ ব্যবহার নিয়েই যত আপত্তি আবুর। তাঁর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ওঁর সঙ্গে কাটিয়েছি। কখনও মনে হয়নি উনি কোনও ধর্মের মানুষের প্রতি এমন মনোভাব পোষণ করেন।’’ অনুযোগের সুরে আবু বলেন, ‘‘এখন ওঁর প্রতিটি কথায় যেভাবে ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পাচ্ছে।’’ আবুর আক্ষেপ, ‘‘শেষ বৈঠকে যে কথা দিয়েছিলেন, সে কথা রাখলেন না দাদা।’’

অন্য দিকে শুভেন্দুর মতকেই সমর্থন করেছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, একটা সম্প্রদায়ের মানুষকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। বিজেপির তমলুক সাংগঠিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েকের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি কোনও সম্প্রদায়ের বিরোধী নয়। যদি এমনটা হত তাহলে এই দলে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে দেখা যেত না।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন