Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Sayani Ghosh

‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে বিতর্ক, টুইট-যুদ্ধে অবিরত যুযুধান সায়নী-তথাগত

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সায়নী বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল।

সায়নী ঘোাষ ও তথাগত রায়।

সায়নী ঘোাষ ও তথাগত রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:১৫
Share: Save:

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় চারদিকে বাগ্‌যুদ্ধের পরিস্থিতি। রাজনীতিক থেকে তারকা— সকলেই যুযুধান। এ বার সেই দলে নাম লেখালেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা প্রাক্তন ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায় এবং অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তথাগত বিজেপি-র নেতাও বটে। অসমবয়সী দুই সহ-নাগরিকের যুদ্ধ বেধেছে টুইটারে।

ঘটনার সূত্রপাত একটি বাংলা চ্যানেলে অতিথি বক্তা সায়নীর বক্তব্য নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে সায়নী বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল। উপরন্তু, এটি বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’’ তার পরেই এক নেটাগরিক টুইট করে আক্রমণ করেন সায়নীকে। তাঁর দাবি, অভিনেত্রী দেশভাগের কথা ভুলে গিয়েছেন। দেশভাগের সময় মুসলিমদের ‘অপরাধ’-এর বিষয়টিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু টুইট-যুদ্ধ। তার পরেই মাঠে নেমেছএন প্রবীণ রাজনীতিক তথাগত। সায়নীকে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, সায়নী ‘টাইপের’ মানুষকে ‘মূর্খ’ বলে মনে করেন তিনি। সেই তালিকায় যোগ করেন বাংলার বামপন্থী মানুষদেরও। ‘ছি! এ সব বলতে নেই। করুক না ওরা (মুসলিম) কিছু হিন্দু খুন ও মেয়েদের ধর্ষণ। হোক না সওয়া কোটি হিন্দু গৃহহীন, পথের ভিখারি। ওরাও তো মানুষ’। এই রকম একটি সংলাপের উদাহরণ দিয়ে তথাগত বলতে চেয়েছেন, ‘সেকুলারপন্থীরা’ এ সবই শিখিয়েছেন ‘এদের’।

সায়নীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল। সায়নী জানান, তিনি প্রথমে স্থির করেছিলেন এই ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’-তে অংশগ্রহণ করবেন না। তার পরে অন্য কথা ভাবলেন। সায়নীর কথায়, ‘‘তথাগত রায়ের সঙ্গে আমার কোনও পূর্বপরিচয় ছিল না। কিন্তু হঠাৎ আমায় ট্যাগ করে আমার ‘টাইপ’ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। এর উত্তর দেওয়াটা জরুরি। আমি ওঁর হাঁটুর বয়সি। কোন স্তরে নামতে চাইছেন তাঁরা, এটা স্পষ্ট হয়ে গেল আমার কাছে।’’ তথাগতের টুইটের জবাবও এই ভাষাতেই দিয়েছেন সায়নী। তাঁর দাবি, দেশভাগের সময় কত জন হিন্দুর মৃত্যু হয়েছিল, সে হিসেব করে এখন যাঁরা মুসলিমদের ‘মারব’ বলে শাসাচ্ছেন, তাঁরাই আদপে ‘গাঁধী কলোনি’-কে ‘গডসে কলোনি’ বানাবেন। সায়নীর বিশ্বাস, এঁরা ‘হিন্দুত্ব’ করতে গিয়ে ‘হিন্দুধর্ম’-এর কথা ভুলে গিয়েছেন। দেশের মানুষের দৈন্যদশা দেখলেই বোঝা যায়, দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য তাঁরা কিছুই করছেন না।

কে কত ‘বাঙালি’ আর কে কতটা ‘অবাঙালি’, তা নিয়ে লড়াই শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালিত্বের পরিমাণকে অন্যতম বিচার্য বিষয় বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে। এ বার সেই তর্কে অবতীর্ণ রাজনীতিক ও অভিনেত্রী। বস্তুত, যুদ্ধ মেধার গন্ডি ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়েও গিয়েছে। সায়নীর ইংরেজি হরফে বাংলা লেখার (য়াকে পরিভাষায় ‘রোমান’ বলা হয়) প্রবণতা পছন্দ হয়নি তথাগতের। তাকে ‘আবোল তাবোল’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে ইংরেজি হরফে বাংলা লিখেই তাঁর টুইটের জবাব দিয়েছেন সায়নী। টলিউড অভিনেত্রীর একের পর এক বাক্যবাণে বিদ্ধ হয়েছেন তথাগত। ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপালের ‘সামাজিক ও মানসিক সংকীর্ণতার’ পরিচয় পেয়ে হতাশ অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘আপনার মতো জিনিস সত্যিই পশ্চিমবাংলার মানুষের কাম্য নয়’।

আরও পড়ুন :দিল্লি যাচ্ছেন শতাব্দী, শাহি-সাক্ষাতের সম্ভাবনা, রাজধানী থেকেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা

আরও পড়ুন :পিছোতে দেবে না বছর চোদ্দোর অমিতা শবর

তবে বিজেপি নেতা মনে করছেন, ‘লেনিনের নিষিদ্ধপল্লিতে যাতায়াত ও সিফিলিসে মৃত্যু’-র বিষয়ে ‘গোপন তথ্য’ ফাঁস করে দিয়েছিলেন বলেই তাঁর উপর বামপন্থীদের ‘জাতক্রোধ’ আর তাই শুধু করুণার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। তবে ওই যুদ্ধ শুধু দু’জনের মধ্যেই আটকে নেই। আশপাশ থেকে নিজেদের বক্তব্য জানিয়েছেন অন্য নেটাগরিকরাও। কোথাও সায়নীকে খুনের হুমকি বা ‘দু পয়সার নাচিয়ে’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কোথাও আবার তথাগত-সহ বিজেপি-কে ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে তথাগত রায়ের শেষ টুইট বলছে, ‘আর পারছি না! ক্ষ্যামা দে, মা লক্ষ্মী!’ তার পর আর সায়নী কোনও টুইট করেননি। অন্য নেটাগরিকদের যুদ্ধ জারি থাকলেও তথাগতর ‘মা লক্ষ্মী’ সম্ভবত ‘ক্ষ্যামা দিয়েছেন’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sayani Ghosh Tathagata Roy WB Politics Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE