তৃণমূল সমর্থক ওসমান মণ্ডল (৪৪)-এর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হল গড়বেতার চমকাইতলায়। সেখানে একটি হিমঘর চত্বরে থাকা ঘর থেকে ছোট আঙারিয়ার বাসিন্দা ওসমানের দেহ উদ্ধার হয়। ওই হিমঘরে নৈশরক্ষী ছিলেন তিনি। এই ওসমান আবার ছোট আঙারিয়া মামলা খ্যাত বক্তার মণ্ডলের ভাই। ২০০১ সালের জানুয়ারিতেই ছোট আঙারিয়া গ্রামে বক্তারের বাড়িতে গুলি চালিয়ে ও পুড়িয়ে বেশ কয়েকজনকে ‘গুম খুন’-এর অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। ওসমানের মৃত্যুর ঘটনা সেই স্মৃতিই উসকে দিয়েছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলেই প্রাথমিকভাবে পুলিশের দাবি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে মোগলেশ্বর মল্লিক, শের আলি মণ্ডল, জলিল খান নামে কয়েকজন দুষ্কৃতী গরিব মানুষের থেকে একশো দিনের মজুরির টাকার ভাগ চাওয়ায় রুখে দাঁড়ান ওসমান। তারপরেই এই ঘটনা। শাসকদলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আগেই অবৈধ পাথর খাদান, গাছ কাটার টাকার বখরা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
ওসমানের স্ত্রী আসিয়া বিবির অভিযোগ, “গরিব মানুষের থেকে একশো দিনের কাজের টাকা দাবি করেছিল গ্রামেরই মোগলেশ্বর মল্লিক, শের আলি মণ্ডল, জলিল খানেরা। আমার স্বামী প্রতিবাদ করে। তা নিয়ে অশান্তি চলছিল।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার বাড়িতে এসেও ওরা স্বামীকে দেখে নেব বলে হুমকি দেয়। শনিবার বিকেল তিনটে নাগাদ স্বামীকে ডেকেও নিয়ে যায়। তাহলে ওরা ছাড়া আর কে মারতে পারে?” বক্তার মণ্ডলেরও বক্তব্য, “একশো দিনের টাকার ভাগ নিয়ে একটা অশান্তি হয়েছিল।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে চমকাইতলায় হিমঘর চত্বরে ওসমানের ঘরেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ঘরের অ্যাসবেস্টসের ছাউনির কিছুটা অংশ ভাঙা ছিল। ঘরটি বাইরে থেকে তালাবন্ধও ছিল। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, ওসমানকে খুন করে ঘরে ঢোকানো হতে পারে। ঘরের ভাঙা অ্যাসবেস্টসের ফাঁকা অংশ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে তাঁকে পুড়িয়ে মারার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করে। বোমাবাজির আওয়াজ শুনে হিমঘর কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওসমানের দেহ উদ্ধার করে। হিমঘরের ম্যানেজার বিদ্যাসাগর শুক্লকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
১৯৯৮ সাল নাগাদ সক্রিয়ভাবে তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে দেখা যেত ওসমানকে। ইদানীং তিনি সে ভাবে রাজনীতি করতেন না। ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত মণ্ডল, জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, স্থানীয় বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীরা। তাঁদের দাবি, “ওই এলাকায় কয়েকজন দুষ্কৃতী অবৈধ পাথর খাদান, গাছ কাটা থেকে নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত ছিল। দলের সমর্থক ওসমান ঘটনার প্রতিবাদ জানাত। এতে কাজে অসুবিধা হওয়ায় ওই দুষ্কৃতীরাই ওসমানকে খুন করেছে।”