বিক্ষুদ্ধ ও ‘নিষ্ক্রিয়’ নেতাদের মানভঞ্জনে তৃণমূল

আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দলে ক্ষত মেরামতের চেষ্টায় নেমেছে তৃণমূল।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০১:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কেউ পঞ্চায়েত প্রতিনিধি ছিলেন, কেউ ছিলেন দলের পদাধিকারী। কিন্তু দলের কোন্দলে কোণঠাসা হয়ে কিংবা স্থানীয় নেতাদের উপর ক্ষোভে দলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছেন। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে জেলায় দু’টি আসনে দল জিতলেও তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। যার পিছনে দলের পুরনো নেতাদের ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকাকেই অন্যতম কারণ হিসাবে মনে করছে শাসক দল। দলের এমনই পুরনো নেতা-কর্মীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে এ বার উদ্যোগী হল তৃণমূল। দলের কাজে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভের কথা শুনে এবং তাঁদের বুঝিয়ে ফের দলের কাজে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

বেশকিছু জেলায় লোকসভা ভোটে এ বার রাজ্যে শাসকদলের ভোটপ্রাপ্তির হার ধাক্কা খেয়েছে। বামেদের পিছনে ফেলে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি লোকসভা আসনে তৃণমূল জিতলেও আগের চেয়ে ব্যবধান কমেছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে পর্যালোচনাও হচ্ছে। আর তাতেই উঠে এসেছে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের নিষ্ক্রিয় থাকার তত্ত্ব। এই পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দলে ক্ষত মেরামতের চেষ্টায় নেমেছে তৃণমূল।

লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের সম্মান দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করতে জনসংযোগ যাত্রার নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, দলনেত্রীর নির্দেশের পর জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের মানভঞ্জনে উদ্যোগী হয়েছেন। জেলার ১৬ টি বিধানসভার মধ্যে তমলুক ও কাঁথি লোকসভার মধ্যে থাকা ১৪ টি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে তৃণমূল। তবে তমলুক, খেজুরি সহ জেলার বেশ কিছু বিধানসভায় আগের চেয়ে ব্যবধান অনেক কমেছে। এ ছাড়াও মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে থাকা এগরা ও ঘাটাল লোকসভার মধ্যে থাকা পশ্চিম পাঁশকুড়া বিধানসভা এলাকায় বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে দলের ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা পুরনো নেতা-কর্মীদের বোঝানোর কাজ শুরু করেছেন।

Advertisement

দলীয় সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম, শহিদ মাতঙ্গিনী, সুতাহাটা সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে নেতাদের একাংশ দলের কোন্দলে কোণঠাসা। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনের সময়ে দলের প্রার্থী হতে না পারায় তাঁদের ক্ষোভ রয়েছে বলে অভিযোগ। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘পুরনো নেতা-কর্মীদের কয়েকজন নানা কারণে দলের কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত নেই। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অভিমান দূর করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁরাও ফের দলের কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’’ শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্বের কয়েকজন লোকসভা ভোটে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ। ফল প্রকাশের পরে এঁদের একাংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন বলে জানা গিয়েছে। ব্লক তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়ে দলের কয়েকজন প্রবীণ ও পুরনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ক্ষোভ-অভিমানের কারণ জেনেছি। বোঝানোর পরে তাঁরা ফের দলের কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন।’’

জেলা তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘দলনেত্রীর নির্দেশমত বিভিন্ন ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্ব পুরনো নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়াতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন