মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় বাড়ছে ক্ষোভ। আতঙ্কে বিদায়ী কাউন্সিলররা। সামনে আসছে অন্দরের কোন্দল।

বিক্ষোভে মদত বিক্ষুব্ধদের, ইঙ্গিত তৃণমূলের তদন্তেই

সর্ষের মধ্যেই ভূত দেখছেন শাসক দলের অনেকে। তাঁদের মতে, বিক্ষোভ-ধর্নায় ইন্ধন জোগাচ্ছেন দলেরই একাংশ।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০১:২৬
Share:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাটমানি ফেরতের নিদানের পরেই রাজ্য জুড়ে চলছে বিক্ষোভ, ধর্না, অবস্থান। তার রেশ পশ্চিম মেদিনীপুরেও। তৃণমূল নেতা- জনপ্রতিনিধিদের বাড়ি গিয়ে কাটমানি ফেরত চাইছেন ভুক্তভোগীরা। কেউ ফেরত দিচ্ছেন। কেউ ফেরানোর মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাচ্ছেন। কেউ আবার দাবি করছেন, তাঁর কাছে কাটমানির এক টাকাও নেই!

Advertisement

এত বিক্ষোভ? সর্ষের মধ্যেই ভূত দেখছেন শাসক দলের অনেকে। তাঁদের মতে, বিক্ষোভ-ধর্নায় ইন্ধন জোগাচ্ছেন দলেরই একাংশ। যেসব বিক্ষুব্ধ এতদিন সুবিধে করতে পারেননি, এ বার তাঁরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন! মুখ্যমন্ত্রীর ওই নিদানের পরে মেদিনীপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর রোকাইয়া খাতুনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সরকারি বাড়ি প্রকল্পের উপভোক্তারা। কাটমানি ফেরতের দাবিতেই ওই বিক্ষোভ হয়। সেই সময়ে রোকাইয়াকে সরাসরি বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বিক্ষোভের পিছনে দলেরই একাংশের মদত রয়েছে। যাদের আমরাই ওয়ার্ডে দলের বিভিন্ন পদে বসিয়েছি।’’ দলের জেলা নেতৃত্বের কাছেও একই অনুযোগ করেছেন রোকাইয়া। সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে জেলা নেতৃত্ব দেখেছেন, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ওই বিক্ষোভের পিছনে বিজেপির কেউ সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। মদত ছিল দলেরই কয়েকজন যুব নেতার। যাদের মধ্যে একজন আবার আসন্ন পুরভোটে টিকিট- প্রত্যাশী!

বিক্ষোভের পিছনে না কি, দলেরই একাংশের মদত ছিল? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের জবাব, ‘‘আমাদের দলে গোষ্ঠীকোন্দলের কোনও ব্যাপার নেই। আর ওই ব্যাপারে দল সবদিকই খতিয়ে দেখছে।’’ তৃণমূলের নেতা- জনপ্রতিনিধিরা না কি এখন বিজেপির থেকেও বেশি ‘ভয়’ পাচ্ছেন দলের বিক্ষুব্ধদের। তাঁরা যদি লোকজন নিয়ে এসে বাড়ির সামনে কাটমানি ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করিয়ে দেন! পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নতুন নয়। প্রায় সব ব্লকেই রয়েছে। জেলায় এসে দলনেত্রী দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সতর্ক করেছেন। একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাতেও থামেনি গোষ্ঠীকোন্দল। গোষ্ঠীকোন্দলের প্রসঙ্গ উস্কে বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘সরকারের টাকার ভাগ- বাঁটোয়ারা নিয়ে তৃণমূলের লড়াই কোনও ভাবেই থামবে না। মানুষই ওদের থামিয়ে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর আর কিছু করার নেই। যা করার মানুষই করবেন।’’ তবে কাটমানি বিক্ষোভের নেপথ্যে কোন্দলের ভূমিকার কথা মানতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, যে সব বিক্ষোভ হচ্ছে, তার ৯৯.৯৯ শতাংশই বিজেপি করাচ্ছে।’’ বাকি .০১ শতাংশ তবে মানুষই করছে? অজিতের জবাব, ‘‘কারও কারও কোন বিষয়ে ক্ষোভ থাকতে পারে।’’

Advertisement

কেমন সেই ক্ষোভ? মেদিনীপুরে ‘হাউজ ফর অল’ প্রকল্পের এক উপভোক্তা বলছিলেন, ‘‘বাড়ি পেতে কাউন্সিলর ও তাঁর এক শাগরেদকে কাটমানি দিতে হয়েছে। এতদিন অভিযোগ জানানোর সাহস হয়নি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ই- মেলে ছবি সহ প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ জানাব। এ ব্যাপারে ওয়ার্ডে থাকা তৃণমূলের ভাল লোকেদের থেকে পরামর্শও নিয়েছি। তাঁরা আমার পাশে রয়েছেন। আমায় সাহস জুগিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন