জয়েও অন্তর্ঘাত কাঁটা 

শহরের ৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে হেরেছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ। তবে সব থেকে বেশি চর্চা চলছে ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৮
Share:

খড়্গপুরের জয়ে উৎসব মেদিনীপুরের বটতলাচকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

একজন ছিলেন বিধায়ক প্রার্থীর দাবিদার। তবে শহরের কাউন্সিলর ওই নেতাকে তৃণমূল টিকিট দেয়নি।

Advertisement

অন্যজন তাঁরই অনুগামী আরেক কাউন্সিলর। তৃণমূলের অন্দরে দু’জনই পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের বিরোধী বলে পরিচিত। খড়্গপুরে বিধানসভা উপ-নির্বাচনে প্রদীপের বড় মার্জিনে জয়ের মাঝেও তাই কাঁটা হয়ে বিঁধছে, ওই দুই কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে তৃণমূলের হার!

শহরের ৬ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে হেরেছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ। তবে সব থেকে বেশি চর্চা চলছে ১৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা জেলা নেতা দেবাশিস চৌধুরী উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটের দাবিদার ছিলেন। তবে টিকিট পাননি। শহরে তিনি প্রদীপ-বিরোধী বলেই পরিচিত। চর্চা শুরু হয়েছে দেবাশিস অনুগামী বলে পরিচিত ২৪নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুষার চৌধুরীর ওয়ার্ডে তৃণমূলের হার নিয়েও। এ ক্ষেত্রে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব সামনে আনছেন প্রদীপ অনুগামীরা। প্রদীপ নিজে অবশ্য বলছেন, “কী কারণে ওই ওয়ার্ডে আমরা ‘লিড’ পাইনি সেটা দল দেখবে। তদন্ত হবে। সবাই তো একসঙ্গে হেঁটেছিলাম। তারপরেও কেন ওই ওয়ার্ডগুলিতে হার হল, তা নিশ্চয়ই দল প্রশ্ন করবে।”

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রদীপ সরাসরি কিছু না বললেও এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলে। প্রদীপ অনুগামী এক কর্মী বলেন, “অনেক চেষ্টা হয়েছিল দাদাকে হারানোর। কিন্তু পারেনি। এখন নিজেরাই হেরে বসে আছে। দলের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, “যেখানে আমাদের পরাজয় হয়েছে তা নিয়ে পরে পর্যালোচনা নিশ্চয় করতে হবে। তার পরে কিছু বলতে পারব।”

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনেও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬৩০ ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তবে এ বার ৩০৪ ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি। দেবাশিসের ব্যাখ্যা, “আমরা গত বার অনেক বেশি ভোটে পিছিয়ে ছিলাম। এ বার সেখানে অনেক কম ভোটে পিছিয়ে পড়েছি। কিছু ভোট কম পড়েছে ও কিছু ভোট কংগ্রেসে চলে গিয়েছে। এ নিয়ে যদি অন্য কোনও কথা হয় সেটা ঠিক নয়।”

২৪ নম্বর ওয়ার্ডেও গত লোকসভা নির্বাচনে ১৯৮৭ ভোটে লিড পেয়েছিল বিজেপি। এ বার মাত্র ৮০ ভোটে হেরেছে তৃণমূল। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তুষার চৌধুরী বলেন, “মানুষ ভোট দিয়েছেন। এখানে আমার কোনও হাত নেই। কিন্তু আমরা যে চেষ্টা করে ১৯০৭টি ভোট ফিরিয়ে এনেছি সেটা প্রমাণিত।”

অন্য দিকে প্রদীপের ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জগদম্বা প্রসাদ গুপ্ত ও ১৮নম্বরের কাউন্সিলর পূজা নায়ডুর ওয়ার্ডে তৃণমূলের জয়ে উচ্ছ্বসিত প্রদীপ শিবির। গত লোকসভায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় আঠারোশো ভোটে পিছিয়ে থাকা তৃণমূল এ বার ৪৯০ ভোটে লিড পেয়েছে। ১৮নম্বরে ওয়ার্ডে প্রায় ৯০০ ভোটে পিছিয়ে থাকা তৃণমূল এ বার ৭৬৯ ভোটে এগিয়ে গিয়েছে। জগদম্বা ও পূজা বলছেন, “দাদার জন্য এবার অনেক বেশি পরিশ্রম করেছিলাম।”

খুশি প্রদীপও। তিনি মানছেন, “সত্যিই জগদম্বা ও পূজা আমার জন্য যে পরিশ্রম করেছেন তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। দলের সৈনিক এমনই হওয়া উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন