টাকা না পেলে তৃণমূল নেতাদেরই ধরব, বলছেন শ্রমিকরা
100 days work

বকেয়া চেয়ে চিঠি, বুমেরাং হবে না তো! 

কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের বাংলা নাম ও তা রাজ্যের বলে দাবি করা নিয়ে বিস্তর চাপানউতোর হয়েছে একটা সময়। তবে একশো দিনের কাজের দায় বরাবরই দিল্লির ঘাড়ে চাপিয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৩ ০৮:০৯
Share:

কয়েকদিন আগে গড়বেতায় বিধায়ক উত্তরা সিংহের সামনে চিঠি লিখছেন একশো দিনের aকাজ প্রকল্পের শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP

একশো দিনের কাজের শ্রমিক থেকে চিঠি সংগ্রহ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বকেয়া মজুরি চেয়ে সেই চিঠি লেখা হচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতোই এই পদক্ষেপ।

Advertisement

কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের বাংলা নাম ও তা রাজ্যের বলে দাবি করা নিয়ে বিস্তর চাপানউতোর হয়েছে একটা সময়। তবে একশো দিনের কাজের দায় বরাবরই দিল্লির ঘাড়ে চাপিয়েছে তৃণমূল।দলীয় নেতৃত্বের দাবি, এ বার বকেয়া চেয়ে লেখা সব চিঠি কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে। 'এক কোটি চিঠি নিয়ে দিল্লি যাব', সাম্প্রতিক সময়ে এ কথা একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে অভিষেককেও। এই কর্মসূচি দলের জনসংযোগেও ভূমিকা নিচ্ছে। তবে তৃণমূলেরই একাংশে রয়েছে আশঙ্কাও।

যাঁরা চিঠি লিখেছেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে তাঁরা বিরূপ হয়ে পড়বেন না তো! তার প্রভাব পঞ্চায়েতের ভোটব্যাঙ্কে পড়বে না তো! মজুরদের একাংশও সাফ জানাচ্ছেন, এ বার মজুরি না পেলে, যে নেতারা চিঠি লিখিয়েছে, তাদেরই ধরব। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর‌ অজিত মাইতির‌ অবশ্য বক্তব্য, "একশো দিনের টাকা যে কেন্দ্র আটকে রেখেছে, সেটা শ্রমিকেরা জানেন। জানেন বলেই বকেয়া মজুরি চেয়ে তাঁরা চিঠি লিখেছেন।"

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে‌ একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বকেয়া রয়েছে ৫১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু মজুরি বাবদই বকেয়া ২৭৭ কোটি টাকা। ব্লকপিছু বকেয়ার‌ অঙ্ক নেহাত কম নয়। সবংয়ে বকেয়া মজুরির পরিমাণ ৩৭ কোটি, ঘাটালে ২২ কোটি, নারায়ণগড়ে ২১ কোটি, ডেবরায় ১৭ কোটি। ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে একশো দিনের কাজ করে মজুরি বাবদ ৩,৩৪৫ টাকা এখনও পাননি গড়বেতার বড়মুড়া অঞ্চলের মজুরডিমা গ্রামের চন্দনা দুলে। মে মাসের গোড়ায় অঞ্চলের তৃণমূল কর্মীদের পরামর্শে তিনি দেশের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর‌ উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। তাতে প্রশ্ন তুলেছেন- 'আজ অবধি আমরা শ্রমিকেরা টাকা পাচ্ছি না কেন?' চন্দনার প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মুখে। চন্দনা বলছেন, "শুনেছি কেন্দ্রের সরকার টাকা পাঠায়নি বলে আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। আমাদের চিঠিতে যদি ওঁরা টাকাটা দেন।"

গড়বেতার তিনটি ব্লকেই প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের একশো দিনের কাজ প্রকল্পের বহু কর্মী বকেয়া টাকা পেতে চিঠি লিখেছেন। তাঁদের আশ্বস্ত করে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, চাপে পড়ে কেন্দ্র টাকা ছাড়তে বাধ্য। গোয়ালতোড়ের কিছু এলাকায় শ্রমিকদের গণ-স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্র জমা পড়েছে তৃণমূল নেতাদের কাছে। সে রকমই এক শ্রমিক সারবোত অঞ্চলের ভূষণ লোহার চিঠি লিখে স্থানীয় তৃণমূল নেতার কাছে গিয়েছিলেন। ওই নেতা তাঁকে না কি আশ্বাস দেন, ''আর কিছুদিন অপেক্ষা করো। তৃণমূল যে ভাবে পথে নেমেছে, কেন্দ্র টাকা দিতে বাধ্য।''

এক ছবি ঘাটালে।‌ কেউ ২০ হাজার টাকা পাবেন, কেউ ৭ হাজার। ঘাটালের চন্দননগরের চাঁদমণি সরেন বলছিলেন, “এক বছরের উপর সরকারের কাছে টাকা পড়ে রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কথা শুনে দিল্লির সরকারকে চিঠি দিয়েছি। টাকা না পেলে নেতাদের তখন ধরব।” ঘাটালের সেকেন্দ্রারপুরের গোপাল মালিক আবার বলছিলেন, “রোদে-জলে কাজ করেও ৭ হাজার টাকা পাইনি। এ বার টাকা না পেলে পঞ্চায়েতে গিয়ে বসে থাকব।”‌

ক’দিন ধরেই বকেয়া টাকা আদায়ে তৃণমূলের চিঠি লেখা কর্মসূচি চলেছে। কোথাও দলীয় অফিসে বসে, কোথাও গ্রামের আটচালায় চলেছে কর্মসূচি।ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনা থেকে এক লক্ষ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের রাজনৈতিক লক্ষ্য যেমন পূরণ হয়েছে, তেমনই টাকা না এলে পাল্টা চাপ যে ঘুরে আসবে, তা মানছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। দাসপুরের যদুপুরের নিলীমা আদক এবং গাদিঘাটের বাসিন্দা কমল মণ্ডলরা যেমন স্পষ্টই বলছেন, “নেতাদের কথা শুনেই চিঠি পাঠিয়েছি। টাকা আনার দায়িত্ব নেতাদেরই নিতে হবে।”

তৃণমূলের দাসপুর ১ ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্র এবং ঘাটাল ব্লক সভাপতি দিলীপ মাজিরা মানছেন, “এরপরেও যদি কেন্দ্র টাকা না পাঠায়, তাহলে মানুষ তো আমাদের কাছেই অভিযোগ জানাবে। এটাই স্বাভাবিক।”

বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি শমিত দাশের দাবি, "একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা এখানে লুট হচ্ছিল। প্রচুর ভুয়ো লোক কাজ পেয়েছে। লুটের টাকায় তৃণমূলের নেতাদের আর্থিক উন্নতি হয়েছে। চিঠিপত্র পাঠিয়ে কিছু হবে না। আগে হিসেব দিক।"

(তথ্য: রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী ও বরুণ দে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন