পথে নামেনি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে টোটো। — নিজস্ব চিত্র।
বৈঠকেই কাটল জট।
বৃহস্পতিবার সকালে টাউন থানায় পুলিশের উদ্যোগে অটো ও টোটো চালকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে হয়। উপস্থিত ছিলেন পুরপ্রধান তথা টোটো চালকদের অস্থায়ী সংগঠনের নেতা প্রদীপ সরকার, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি পরিচালিত অটো সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী প্রমুখ। যদিও সিটুর অটো চালক সংগঠনের কেউ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বুধবার বাসস্ট্যান্ডের অটো স্ট্যান্ডে টোটো দাঁড়ানোয় দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। তারপরেই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় অটো চালকেরা। বুধ ও বৃহস্পতিবার খড়্গপুরের রাস্তায় টোটোরও দেখা মেলেনি। দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অটো ও টোটো চালকেরা ধর্মঘট তুলে নিতে সম্মত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই শহরে অটো চলাচল শুরু করেছে। যদিও এ দিন টোটো চলেনি। টোটোগুলির মধ্যে রুট বণ্টন করার পরে টোটো চলাচল ফের শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে।
ঠিক হয়েছে, আপাতত শহরে অটো ও টোটো দুইই চলবে। তবে অটো ও টোটোর পৃথক রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে শহরে প্রায় একশোটি টোটো চলাচল করে। টোটোর জন্য রেলশহরে মালঞ্চ, নিমপুরা, আয়মা, সুভাষপল্লি-সহ আটটি রুট চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। আয়মা বাদে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বাকি সব রুটের টোটো মিলবে। বোগদা থেকে মিলবে আয়মার টোটো। তবে মহকুমাশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত যাওয়ার জন্য সুভাষপল্লি ছাড়া কোনও টোটো গোলবাজার ও বাসস্ট্যান্ডের উপর দিয়ে যেতে পারবে না। নতুন করে টোটো বিক্রি বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আইসির সঙ্গে আরটিও-র কথা হয়েছে। টোটোর রুট পারমিট তৈরির কথাও বলা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নতুন রুট পারমিট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বৈঠকে নির্দিষ্ট রুটেই টোটো চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
শহর অটো-রিকশা অপারেটর ইউনিয়ন-এর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “বৈঠকে টোটো বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। শহরে বর্তমানে যে ক’টি টোটো চলাচল করে, সেগুলিও নির্দিষ্ট দশটি রুটেই চলবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শহরের বেশিরভাগ টোটো গোলবাজার ও বাসস্ট্যান্ড বাদ দিয়ে চলবে। বাসস্ট্যান্ডের উপর দিয়ে চলাচল করলেও টোটোগুলি সেখানে দাঁড়াবে না। এই সিদ্ধান্তে সহমত হয়েই চালকদের ধর্মঘট তুলে নিতে বলা হয়েছে।’’
যদিও অটো-টোটো চালকদের গণ্ডগোলের জন্য প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তাই দায়ী বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বিরোধীদের অভিযোগ, শহরে যে ভাবে টোটো বিক্রি হয়েছে তার সবটা জেনেও নীরব থেকেছে প্রশাসন। ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। সিটু পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর অটো অপারেটর ইউনিয়ন-এর সম্পাদক অনিল দাস বলেন, “এই সমস্যার জন্য সরকারই দায়ী। টোটোর বৈধতা দেওয়া ও রুট পারমিট নির্দিষ্ট করার কাজ সরকারকেই করতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘টোটোর রুট ঠিক করার এক্তিয়ার কোনও ইউনিয়নের নেই। সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করে সরকার বেকার টোটো চালকদেরই বিপাকে ফেলেছে।”
বৃহস্পতিবারও দিনভর শহরে অটো ও টোটো পরিষেবা বন্ধ থাকায় হয়রানির শিকার হয় শহরবাসী। সুভাষপল্লির বাসিন্দা সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “অফিসে পৌঁছতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে ১০ টাকার জায়গায় ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিতে হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অটোর একচেটিয়া দৌরাত্ম্য ঠেকাতে শহরে টোটো চালু হওয়া উচিত। তবে অটো ও টোটো চলাচল নিয়ে কোনও অশান্তি যাতে না হয়, সেই বিষয়টি প্রশাসনকে দেখতে হবে।”