মোবাইলে ফোন করে ব্যাঙ্কের লোক পরিচয় দিয়ে এটিএম কার্ডের নম্বর আপডেটের অজুহাতে গোপন পিন নম্বর জেনে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাঙ্কের টাকা তুলে নেওয়ার মত ঘটনায় প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ নতুন নয়।
ফেসবুকে আলাপ জমিয়ে বন্ধুত্ব করার পরে প্রতারণার অভিযোগও নেহাত কম নয়।
আবার পরিচিত কারও নামে ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে অন্য ছবি দিয়ে নানা অশ্লীল মন্তব্য লিখে দিয়ে সামাজিকভাবে হেনস্থার মত ঘটনা তো আকছার ঘটছে।
ওয়েবসাইট বা নেট প্রযুক্তির মাধ্যমে এই রকমের অপরাধকে সাইবার ক্রাইম হিসেবে গণ্য করা হয়। থানায় গিয়ে এ নিয়ে অভিযোগ জানানোর পর তা নিয়ে পুলিশ তদন্তে নেমে কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ আধিকারিক-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।
অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ আধিকারিকদের এ বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। রাজ্য পুলিশের সিআইডি’র সাইবার ক্রাইম সেলের আধিকারিক ও প্রযুক্তিবিদরা এসে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের অফিসের কনফারেন্স হলে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি), সার্কেল ইনস্পেক্টর (সিআই), মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের নিয়ে দু’টি ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের চিহ্নিত করে ধরা ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অপরাধীদের ধরতে ও তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষন নেওয়া পুলিশ আধিকারিকরা এরপর থানার অন্যান্য আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এইসব সাইবার অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে ধরতে ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ আধিকারিকদের আরও দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিআইডি’র সাইবার সেলের সাহায্য নিয়ে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাইবার ক্রাইম ও মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের অপরাধীদের ধরতে জেলাস্তরে একটি সাইবার সেল রয়েছে। জেলার বিভিন্ন থানায় সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অভিযোগ আসার পর তা জেলা সাইবার সেলকে জানানো হয়ে থাকে। জেলা সাইবার সেল ওইসব অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা সহ তাঁদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থানাগুলিকে এ বিষয়ে সাহায্য করে থাকে। এরপর অভিযুক্তদের ধরতে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করে ও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
জানা গিয়েছে ,জেলার বিভিন্ন থানায় সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত যে পরিমাণ অভিযোগ জমা পড়ে তার দ্রুত তদন্ত করার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত পুলিশ আধিকারিক না থাকার ফলে প্রায়ই নানাভাবে অসুবিধায় পড়তে হয়।ফলে অনেক সময় অপরাধীরা পুলিশের নাগালের বাইরে চলে যায়। সমস্যা মোকাবিলা করতে অভিযোগের তদন্তের জন্য জেলার পুলিশ আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।