নন্দীগ্রাম দিবসে প্রথম মিছিল হল ঘাটালে। আর সেই কর্মসূচি ঘিরেও পুরভোটের মুখে ফের বেআব্রু হল ঘাটালে শাসক দলের গোষ্ঠী কোন্দল। নন্দীগ্রামে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার ঘাটাল শহরে মিছিল করে তৃণমূলের ঘাটাল ব্লক সভাপতি অজিত দে-র অনুগামীরা। প্রায় হাজার খানেক দলীয় কর্মী-সমর্থক নিয়ে এই মিছিল আসলে ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের গোষ্ঠীর কাছে ক্ষমতা প্রদর্শন বলেই দলের অন্দরের খবর।
শনিবারের মিছিলে স্বভাবতই ছিলেন না শঙ্করবাবু। তিনি বলেন, “শনিবারের মিছিল নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কেউ মিছিল করতেই পারে। দলের মধ্যে কোনও কোন্দল নেই।” এ প্রসঙ্গে ব্লক সভাপতি অজিতবাবুর বক্তব্য, “আসলে যাঁদের মন চেয়েছিল, তাঁরাই মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন। মিছিল করা যাবে না বলে দলের কোনও নির্দেশ ছিল না। তাই কর্মীদের চাঙ্গা করতেই এই মিছিল।”
আসন্ন পুরভোটে প্রার্থী তালিকা নিয়ে ঘাটালে তৃণমূলের জট এখনও কাটেনি। পরিস্থিতি এমন যে প্রচারের জন্য দেওয়াল ঘেরা থেকে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ কিছুই শুরু হয়নি। হতাশ তৃণমূল স্তরের কর্মীরাও। এরই মধ্যে শনিবার নন্দীগ্রাম দিবসের মিছিল ঘিরে দলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় শোরগোল পড়েছে। ওই মিছিলে অজিত অনুগামী পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান, একাধিক দলীয় কাউন্সিলর ও নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
ঘাটাল পুরসভায় ১৭টি ওয়ার্ড। মাস খানেক ধরে দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে এখন প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছেন বিধায়ক শঙ্করবাবু। কিন্তু বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলের মধ্যেই নানা ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ, বহু ওয়ার্ডে দলের ওয়ার্ড কমিটির নেতৃত্ব এবং কর্মীদের প্রস্তাবে মান্যতা দিচ্ছে না দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে। পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উদয়শঙ্কর সিংহ রায়কে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ওয়ার্ডের দলীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা অবশ্য বলেন, “উদয়বাবুর ওয়ার্ড এ বার সংরক্ষিত। তাই প্রথমেই ওঁকে এক নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তাঁর পুরনো ওয়ার্ডে (২ নম্বর) উদয়বাবুর স্ত্রীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে। ছোট শহরে একই পরিবারের দু’জনকে টিকিট দেওয়া যায় কী”? উদয়র বক্তব্য, “প্রার্থী হওয়া বা না হওয়া নিয়ে আমার ক্ষোভ নেই। তবে দলের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখালে আমার কী করার আছে?”
তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই দু’টি ওয়ার্ডে এখনও প্রার্থী ঠিক হয়নি। আবার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত হলেও দুই গোষ্ঠীর আকচাআকচি চলছে। সূত্রের খবর, দলের সবাইকে নিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি না হওয়ায় ব্লক সভাপতি অজিতবাবু নিজে একটা তালিকা তৈরি করে ফেলেছেন। প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে কোন্দলের কথা অবশ্য মানছেন না শঙ্করবাবু। তাঁর বক্তব্য, “দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ওয়ার্ড কমিটি থেকে বুথ স্তরের কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে এবং কোর কমিটিকে সঙ্গে নিয়েই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কারোও ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে সব মিটে যাবে। কারণ, কেউ দলের উর্ধ্বে নয়।”