ফড়ের ফাঁড়া কাটছে না

চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে সরকার। জেলায় কি ধানক্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত? সমবায় সমিতিগুলির ভূমিকা কেমন। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রশাসন? চাষিদের অভিযোগ গতি নেই ধান কেনার প্রক্রিয়ায়। কী বলছেন আধিকারিকেরা। এখনও কি ফড়দের দাপট আছে? প্রশাসনের তরফে প্রচার কি সন্তোষজনক? খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার। চাষিদের পাশে দাঁড়াতে সহায়ক মূল্যে ধান কিনছে সরকার। জেলায় কি ধানক্রয়কেন্দ্র পর্যাপ্ত? সমবায় সমিতিগুলির ভূমিকা কেমন। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রশাসন? চাষিদের অভিযোগ গতি নেই ধান কেনার প্রক্রিয়ায়। কী বলছেন আধিকারিকেরা। এখনও কি ফড়দের দাপট আছে? প্রশাসনের তরফে প্রচার কি সন্তোষজনক? খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী 

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৩
Share:

ধান কেনার ব্যস্ততা দাসপুরে। নিজস্ব চিত্র

কর্মচঞ্চল কর্মতীর্থ। বলরামগড় ফুটবল মাঠের পাশে কর্মতীর্থের চেহারাটা এখন এমনই।

Advertisement

চাষিদের ভিড়। ধানক্রয় কেন্দ্রের কর্মীরা ব্যস্ত। মাপজোকের পর ধান বস্তাবন্দি করে লরিতে তুলছেন শ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার সেই ভিড়েই দেখা মিলেছিল আজবনগরের বিশ্বজিৎ বেরা, জলসরার তাপস ঘোষ, মূলগ্রামের শেখ কৌশর আলিদের সঙ্গে। এঁরা সকলেই ধান বিক্রি করতে এসেছিলেন। কেউ নিয়ে এসেছিলেন ১০ কুইন্টাল ধান। কেউ ২০ কুইন্টাল। কারও আবার আরও বেশি। ঘণ্টা তিনেক থেকেও দেখা মেলেনি কোনও ছোট চাষির। নেহাতই ঘটনাচক্র! নাকি অন্য কিছু!

ফড়েদের দাপট রুখতে চেষ্টার অন্ত নেই প্রশাসনের। কখনও চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা। কখনও আবার ধান নিয়ে হাতে-হাতে চেক। প্রশাসনের উদ্যোগে ফড়ে-রাজের ফাঁস আলগা হচ্ছে কি? তাপস বললেন, ‘‘ফড়ে বা ধান ব্যবসায়ীরা সময়ে-অসময়ে দেখেন। আগাম টাকা দেন। ঘর থেকেই ধান বস্তাবন্দি করে নিয়ে যায়। বিক্রির কোনও ঝক্কি নেই।” শেখ কৌশরের কথায়, “কুইন্টালে তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা কম দামে ধান বেচতে হয়। কিন্তু এত সুবিধা কে দেবে!”

Advertisement

ধান বিক্রির নিয়ম হল, চাষিকে প্রথমে নাম নথিভুক্ত করিয়ে সংশ্লিষ্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। এরজন্য জরুরি আধার কার্ড, অ্যাকাউন্টের পাশবই এবং দু’কপি ছবি। কার্ড হাতে এলেই একজন চাষি ১৭৭০ টাকা দরে সবার্ধিক ৩০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। যার বাজার মূল্য ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা। বলরামগড়ে ধান বিক্রি করতে এসে পান্নার এক চাষি বলেই ফেললেন, “আমাদের সব কার্ড তো ব্যবহার করছে সেই ফড়েরাই। ধান বস্তাবন্দি করা, গাড়িতে চাপিয়ে ক্রয় কেন্দ্রে আনা-সব দায়িত্ব তো ব্যবসায়ীরা সামলাচ্ছেন। আমরা এসে শুধু চেক সংগ্রহ করছি।” এখানেই শেষ নয়। আরেক চাষি পরে যা বললেন তা আরও মারাত্মক। বললেন, “ব্যাঙ্কের টাকা তোলার স্লিপে সই করাও আছে। চেক জমার পর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে। আমাদের অ্যাকাউন্ট থেকেই ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যায়। ফড়েরা আমাদের পারিশ্রমিক দেন।” চাষিদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এমনিতেই ব্লকের সদর শহর ছাড়া আর কোথাও সরকারি শিবির নেই। চাষিদের একাংশ ফড়েদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে রাখেন। তাই কিছু ধান ফড়েদের দিতেই হবে।

ফড়েদের দাপট কমানো যাচ্ছে না কেন? মহকুমা খাদ্য নিয়ামক পিটার বর বলেন, ‘‘ধানক্রয় কেন্দ্র ক্ষুদ্র, মাঝারি, বড় সব ধরনের চাষি আসছেন। নাম নথিভুক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি শিবিরে ফড়ে আটকাতে সব ব্যবস্থা সরকার করছে।’’ প্রতিটি ধানক্রয় কেন্দ্র প্রতিদিন নিয়ম করে সাতশো-আটশো কুইন্টাল ধান কিনছে। চাষির সংখ্যা ৩০-৩৫। দাসপুর ধান ক্রয়কেন্দ্রের এক কর্মী মানলেন, “নীচুতলায় নজরদারির বড় অভাব। কোন চাষির ধান কবে কেনা হবে তা আমরা জানিয়ে দিচ্ছি। যত চাষি ক্রয়কেন্দ্রে আসছেন তাঁদের সকলের এত চাষ নেই। তালিকা ধরে নজর চালালেই পরিষ্কার হবে ধান চাষির বাড়ি থেকে আসছে না ব্যবসায়ীর গোলা থেকে। তবেই কমবে ফড়ের রমরমা।”

ফড়েদের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন