প্রকল্প উদ্বোধনই সার

ঘোলা জলে সঙ্কট খড়্গপুরে

এতদিন প্রথম প্রকল্প থেকে আসা জলের জোগান ছিল চাহিদার তুলনায় কম। তাই জলের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ খনন করে পুরসভা। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ নলকূপের হাল খারাপ বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০২:১৬
Share:

বদ্ধ: এমনই অবস্থা মেচেদা বাজার সংলগ্ন নিকাশি খালের। জমা জল মশার আঁতুড় ঘর। নজর নেই প্রশাসনের। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছে শহরের দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের। তারপরেও খড়্গপুরে জল সমস্যা মেটেনি। কোথাও জল পড়ছে সুতোর মতো, আবার কোথাও কল দিয়ে পড়ছে ঘোলা জল। বর্ষাতেও জল সঙ্কটে নাজেহাল শহরের বাসিন্দারা।

Advertisement

জল সমস্যা মেটাতে খড়্গপুরের কেশাপালে দ্বিতীয় জলপ্রকল্প গড়ে উঠেছে। গত ৩ জুন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পুরসভার দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি উদ্বোধনের সময়ই একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে পুরসভা। অধিকাংশ কাউন্সিলরের দাবি, তাঁদের এলাকার পাইপ লাইনের সঙ্গে দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের পাইপলাইন সংযুক্ত করা হয়নি। অনেক জায়গায় আবার নতুন জলপ্রকল্পের জন্য পাইপই পাতা হয়নি। প্রথম প্রকল্পের পুরনো পাইপ লাইন দিয়েই দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের জল ঝরিয়ার জলাধার পর্যন্ত আনা হচ্ছে। ফলে প্রথম প্রকল্পের সরবরাহ বন্ধ রেখে দ্বিতীয় প্রকল্পের জল আনতে হচ্ছে। ফলে শহরের অধিকাংশ এলাকার মানুষ নতুন জলপ্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

এতদিন প্রথম প্রকল্প থেকে আসা জলের জোগান ছিল চাহিদার তুলনায় কম। তাই জলের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ খনন করে পুরসভা। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশ নলকূপের হাল খারাপ বলে অভিযোগ। অনেক জায়গাতেই বিকল নলকূপ দিয়ে জল উঠছে না। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাবাড়ি সংলগ্ন গভীর নলকূপটি বিকল থাকায় জল পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। তালবাগিচার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডেও সমস্যা একই। ওই ওয়ার্ডের চারটি গভীর নলকূপের মধ্যে হাইস্কুল, রথতলা ও ভারত সেবাশ্রম সংলগ্ন এলাকার নলকূপ থেকে কম জল উঠছে বলে অভিযোগ। ভারত সেবাশ্রম সংলগ্ন এলাকার নলকূপ থেকে ঘোলা জল পড়ায় নাজেহাল অবস্থা এলাকার বাসিন্দাদের। এলাকার বাসিন্দা কমল অধিকারী বলছেন, “বর্ষাতেও ঘোলা জল আসছে। সমস্যার কথা একাধিকবার পুরসভাকে জানিয়েছি। কিন্তু সুরাহা হয়নি।” স্থানীয় সিপিএমের কাউন্সিলর স্মৃতিকণা দেবনাথের কথায়, “এখনও এলাকায় দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের পাইপলাইন সংযুক্ত করা হয়নি। ফলে পুরনো প্রকল্পে জল আসছে না। গভীর নলকূপের মাধ্যমে যেটুকু জল সরবরাহ হচ্ছে তাও পর্যাপ্ত নয়। অনেক জায়গায় ঘোলা জলও সরবরাহ হচ্ছে।”

Advertisement

খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডেও নোংরা জল আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা সূর্যেন্দু মহাপাত্রর অভিযোগ, “বেশ কয়েকটি জায়গায় পাইপ ফেটে রয়েছে। সেই ফাটা অংশ দিয়ে পাইপের জলের সঙ্গে নোংরা মিশছে বলে মনে হচ্ছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘দ্বিতীয় জলপ্রকল্প থেকে ঘোলা জল আসছে। বাধ্য হয়ে নোংরা জল পান করতে হচ্ছে। পুরসভায় সমস্যার কথা জানানোর পরেও সমাধান হয়নি।”

পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ না করেই কেন দ্বিতীয় জলপ্রকল্প চালু করা হল? পুরসভার জল বিষয়ক পুর-পারিষদ তৈমুর আলি বলেন, “শহরের সর্বত্র দ্বিতীয় জলপ্রকল্পের জল পেতে আরও তিনমাস সময় লাগবে। কিছু জায়গায় পাইপ লাইন ফেটে গেলেও বৃষ্টির জন্য কাজ করা যাচ্ছে না। তাই হয়তো সমস্যা হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গভীর নলকূপ খারাপের অভিযোগ এলে মেরামতির চেষ্টা হচ্ছে।” পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার অবশ্য বলছেন, “জল নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। দু’একটি জায়গায় গভীর নলকূপের জলস্তর নেমে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। অভিযোগ পেয়েই মেরামত হয়ে যাচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন