নোটের চোট, কাজ হারিয়ে সোনার শিল্পী এখন দিনমজুর!

নোটবন্দির দু’বছর পার। সময় হল ফিরে দেখার। ঘাটালের সোনার কারিগরেরা কাজ হারিয়ে ফিরেছিলেন গ্রামে। কেমন আছেন তাঁরা। টাঁকশালের কর্মীরা সড়গড় হলেন ই-লেনদেনে? কেমন আছে জঙ্গলমহল। খোঁজ নিল আনন্দবাজার শুরুতে কাজ হারিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০ হাজার সোনার কারিগর ঘরে ফিরেছিলেন। তাঁদের অনেকেই ফের কাজে ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা থেকে গিয়েছেন পেট চালাতে তাঁদের কারও ভরসা দিন মজুরি। আবার কেউ সমর্থন প্রকল্পের টাকায় নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু কোথাও যেন তাল কেটে গিয়েছে নোটবন্দিতে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

কেনাকাটা: আজ, মঙ্গলবার ছট পুজো। সোমবার খড়্গপুরের গোলবাজারে কুলো বিকিকিনি। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

দু’বছরেও নোটবন্দির ধাক্কা সামলাতে পারেনি ঘাটাল।

Advertisement

শুরুতে কাজ হারিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০ হাজার সোনার কারিগর ঘরে ফিরেছিলেন। তাঁদের অনেকেই ফের কাজে ফিরে গিয়েছেন। যাঁরা থেকে গিয়েছেন পেট চালাতে তাঁদের কারও ভরসা দিন মজুরি। আবার কেউ সমর্থন প্রকল্পের টাকায় নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। কিন্তু কোথাও যেন তাল কেটে গিয়েছে নোটবন্দিতে।

মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে সোনার গয়না তৈরির কাজ শিখেছিলেন দাসপুরের চাঁইপাটের গোবিন্দ রুইদাস। তিনি এখন অটো চালাচ্ছেন। গোবিন্দের আক্ষেপ, “আমি সমর্থন প্রকল্পের টাকা পায়নি। রাজকোটে সোনার কাজ করতাম। ভাল রোজগার ছিল। নোটবন্দির সময় কাজ চলে যায়। এখন পরিবার নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।” বছর দুয়েক আগে আচমকাই দোকানে ঝাঁপ বন্ধ করে দিল্লি থেকে গ্রামে ফিরে আসেন ঘাটালের কেলেগোদা গ্রামের যুবক প্রভাস জানা। তিনি বললেন, “তখন তো মুখ্যমন্ত্রী পাশে থাকার কথা বলেছিলেন। আমাদের জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্পও ঘোষণা করেছিলেন। কোথায় টাকা? সংসার চালাতে মজুর খাটছি।” গোবিন্দ, প্রভাসের মতো ঘাটাল মহকুমার অনেক যুবকই সমর্থন প্রকল্পের টাকা পাননি। এখানে কাজের সুযোগ কম। তাই গ্রামে থেকে যাওয়া গয়নার কারিগরদের অনেকেই অন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দাসপুরের বাদল দাস বললেন, ‘‘আমরা গয়না তৈরির কাজ জানি। কিন্তু এখানে তো কাজের সুযোগ কম। তাই পেট চালানোর জন্য অন্য কাজ করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: উত্তরের একাধিক বাজারে ইলিশে ভরসা ভিন্‌ রাজ্য

কেউ কেউ অবশ্য সমর্থন প্রকল্পের টাকা পেয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। দাসপুরের উৎপল সাউ বলছিলেন, “নোটবন্দির সময় দিল্লিতে সোনার ব্যবসা লাটে উঠেছিল। তখন থেকে গ্রামের বাড়িতে। সরকারের দেওয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদানে ব্যবসা করছি। দোকানে দোকানে মিষ্টির প্যাকেট সরবরাহ করি।” জোতঘনশ্যামের যুবক নিমাই প্রামাণিক রকমারি হার তৈরি করতেন। সরকারি টাকা পেয়ে আলুর ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি।

নোটবন্দির পরপরই রাজ্য সরকার কাজ হারানো যুবকদের পাশে দাঁড়াতে সমর্থন প্রকল্প চালু করেছিল। পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা হয়েছিল। জেলায় প্রায় বারো হাজার যুবক ওই টাকা পেতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হাজার-বারশো যুবকের অ্যকাউন্টে ওই টাকা এসেছিল। অভিযোগ, এখন এ নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও উচ্চবাচ্য নেই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, “কোনও পরিকল্পনা না করেই প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করেছিল সরকার। তাই প্রৃকত কাজ হারানো ভাইয়েরা টাকা পায়নি। সরকার আর কবে দেবে?”

আরও পড়ুন: নোটবন্দি তরজা মোদী-রাহুলের

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নজর আছে। যাঁরা আবেদন করছিলেন সংশ্লিষ্ট সকলে ওই অনুদান পাবেন। স্ক্রুটিনি চলছে। টাকা আসা মাত্রই দেওয়া হচ্ছে।” পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে আসার পরে অনেকে তো ফের গিয়েছেন ভিন রাজ্যে। কেমন আছেন তাঁরা? স্বর্ণশিল্পী সংগঠন সূত্রের খবর, নোটবন্দির পর ফিরে আসা সোনার কারিগরেরা ভিন রাজ্যে কাজের সুযোগ পেয়েছেন বটে, তবে তাঁদের রোজগার কমেছে অনেকটা। দিল্লির করোলবাগের স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের পক্ষে দীপক ভৌমিক মানলেন, “আগের মতো সুখ বা টাকা কোনওটাই নেই সোনার কাজে। কী করব। পেটের দায়ে ভিন রাজ্যে পড়ে থাকতে হচ্ছে। নতুন কারিগরও আসছে না। কাজেও স্বাচ্ছন্দ্যও নেই।”

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন