Jhargram

Jhargram: শ্রাবন্তী-খুনের তদন্তে আবছা ফুটেজই আলো

অরণ্যশহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা বিধবা শ্রাবন্তীকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ রবিবারই দায়ের করেন তাঁর মামা তরুণ দে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ০৮:০৪
Share:

সোমবার ঝাড়গ্রাম আদালতে ধৃত পুলিশকর্মী প্রতাপ

যুবতী খুনে গ্রেফতার হয়েছেন ঝাড়গ্রাম থানার কনস্টেবল প্রতাপ নস্কর। পুলিশের সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যাচ্ছে, গত শনিবার সাড়ে ১১টা নাগাদ নিহত শ্রাবন্তী চক্রবর্তীর বাড়িতে সাদা পোশাকে এসেছিলেন প্রতাপ। তবে সদর দরজায় কড়া না নেড়ে ডান পাশের দরজার দিকে যান। খানিক পরে ফিরে মেন সুইচ অফ করে বাড়ির বাইরের আলোও নিভিয়ে দেন। চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় পরের ঘন্টা দেড়েক কী ঘটেছিল সেই ফুটেজ অবশ্য আবছা।

Advertisement

তবে তদন্তে ওই ফুটেজই অনেক কিছুই স্পষ্ট করে দেবে বলেই অনুমান। শ্রাবন্তীর বাড়ির উল্টোদিকে এক বাড়িতে রাস্তার দিকে তাক একাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে চোরের উৎপাতের জন্যই। পুলিশ সূত্রে খবর, তারই অস্পষ্ট ফুটেজে একটি টর্চের আলো এবং পরে দু’টি টর্চের আলো শ্রাবন্তীর বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। পরে বাইকেও একজন এসেছে, যে মোবাইলে কথা বলে বাড়ির ডান দিকের অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। রাত একটা নাগাদ পুলিশের গাড়ি থেকে উর্দিধারী তিনজনকেও নামতে দেখা যাচ্ছে। আর তার বেশ কিছুক্ষণ পরে কাউকে বয়ে এনে সেই গাড়িতে তোলা হচ্ছে। গোটা সময়টাই বাইরের আলো জ্বালানো হয়নি। পুলিশের গাড়ির হেডলাইটও নেভানো ছিল।

অরণ্যশহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুরের বাসিন্দা বিধবা শ্রাবন্তীকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ রবিবারই দায়ের করেন তাঁর মামা তরুণ দে। প্রতাপকে গ্রেফতার করে সোমবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে অভিযুক্তের দুই আইনজীবী মলয় ভদ্র ও সায়ক ভদ্র দাবি করেন, ‘‘প্রতাপকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সরকারি আইনজীবী অনিল মণ্ডল অবশ্য উপযুক্ত তদন্তের জন্য অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করেন। বিচারক প্রতাপকে তিনদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের তরফে আদালতে দাবি করা হয়েছে, খবর পেয়ে শনিবার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম থানার এসআই বিষ্ণুপদ পাত্র, কনস্টেবল বিধান মণ্ডল এবং ঘোড়াধরার বাসিন্দা অলোক ধাড়া শ্রাবন্তীর বাড়িতে যান। ওই যুবতীকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে নিয়ে আসেন তাঁরাই। পুলিশের আবেদন ক্রমে এ দিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ওই তিন জনের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করানো হয়। এ দিনই মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে মেদিনীপুর পুলিশ মর্গে শ্রাবন্তীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। সেই অনুযায়ী তদন্ত এগোবে।’’

Advertisement

স্বামীর মৃত্যুর পরে দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন শ্রাবন্তী। পরে বিবাহিত প্রতাপের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। প্রতাপের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে। সম্প্রতি সম্পর্কের টানাপড়েন চলাকালীন প্রতাপ শ্রাবন্তীর বাড়ির দরজা বাইরে থেকে আটকে মেন সুইচ অফ করে চলে যেতেন বলে পড়শিদের অভিযোগ। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘প্রতাপের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল পিঙ্কি (শ্রাবন্তীর ডাকনাম)। ইট ছুড়ে প্রতাপকে তাড়িয়েছিল। শনিবার রাত ৯টা নাগাদও প্রতাপ এসে পিঙ্কিকে শাসিয়ে যায়।’’

ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য শ্রাবন্তীর বাড়ি সিল করেছে পুলিশ। বাইরে পাহারা। নাবালক ছেলে অনীক ও মেয়ে তানুশিয়া এখনও সবটা বোঝেনি। শ্রাবন্তীর মামা তরুণ দে জানালেন, ভাগ্নীর দু’টি মোবাইলই উধাও। স্বামীর মৃত্যুর পরে দুই সন্তানকে মানুষ করতে কঠোর পরিশ্রম করছিলেন শ্রবান্তী। স্কুটিতে অনলাইন সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন। প্রতাপের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা অজানা ছিল না প্রতিবেশীদের। শ্রাবন্তীর ছেলেমেয়েদেরও বেড়াতে নিয়ে যেতেন প্রতাপ। কিন্তু সম্পর্কে কেন ফাটল ধরল স্পষ্ট নয়।

এদিন রাতে শ্রাবন্তীর দেহ নিয়ে ঝাড়গ্রামের পাঁচ মাথার মোড়ে পথ অবরোধ করেন এলাকাবাসী। অবরোধে ছিল তাঁর সন্তানরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন