শ্রমিক অসন্তোষের জেরে খড়্গপুরের নিমপুরায় টাটা মেটালিক্স কারখানায় মঙ্গলবার ঘণ্টা খানেক উৎপাদন বন্ধ থাকার অভিযোগ উঠল। কারখানার এক সূত্রে খবর, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর বিরোধের জেরেই অশান্তির ঘটনা ঘটে। পরে অবশ্য আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটেও যায় বলে খবর।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরু থেকেই রাজধর্ম পালনের বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পক্ষেত্রে অশান্তি রুখতেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তিনি। তার প্রতিফলন দেখা গেল বুধবার। এ দিন তড়িঘড়ি মেদিনীপুরে তৃণমূলের এক বৈঠকে কারখানায় গোলমাল নিয়ে আলোচনা হয়। দলের এক সূত্রে খবর, এরপরই তৃণমূলের খড়্গপুর- ১ ব্লক সভাপতি শক্তি মণ্ডলকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও প্রকাশ্যে তৃণমূল নেতৃত্ব শক্তিবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার কথা মানতে নারাজ।
এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “শক্তিবাবু শারীরিক ভাবে অসুস্থ। দলের সব কিছু ঠিকঠাক দেখতে পারছিলেন না। এ দিন উনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন।’’ শক্তিবাবু খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদেও রয়েছেন। অসুস্থ হলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দায়িত্ব তিনি কী ভাবে সামলাবেন? অজিতবাবুর জবাব, “উনি আর দলের ব্লক সভাপতি থাকছেন না, এখন এ টুকুই বলতে পারি!”
কোনও গোলমালের ঘটনার কথা মানতে নারাজ কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কারখানার ম্যানেজার (এইচআর) তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কারখানায় কোনও ঘটনা ঘটেনি। উৎপাদনও বন্ধ হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ সব খবর ঠিক নয়। কোথাও অভিযোগও জানাইনি।”
দলীয় সূত্রে খবর, খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলের ওই এলাকায় আইএনটিটিইউসি-র দু’টি গোষ্ঠী সক্রিয়। একদিকে রয়েছেন শক্তি মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীরা। অন্য দিকে রয়েছেন খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল ও তাঁর অনুগামীরা। অভিযোগ, মঙ্গলবার কারখানা চত্বরে স্থায়ী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লোকেরা বিরোধে জড়ায়।
দলের এক সূত্রে খবর, শিল্পক্ষেত্রে অশান্তির জেরেই শক্তিবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। জহরবাবুর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিতবাবুও মানছেন, “জহর পালকে এ দিন সতর্ক করা হয়েছে। উনি সতর্ক না হলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, “কারখানায় কোনও রকম অশান্তি দল বরদাস্ত করবে না।”
শক্তিবাবু বলেন, “ওই কারখানায় সামান্য একটা সমস্যা হয়েছিল। ওটা শ্রমিকদের ব্যাপার।” তিনি বলছেন, “বয়স হচ্ছে। তাই দলের ব্লক সভাপতির পদ নিজেই ছাড়তে চেয়েছি। এ দিন জেলা সভাপতিকে এটা জানিয়ে দিই।” জহরবাবু বলেন, “ওই কারখানার সমস্যার কথা জানতে পেরে দ্রুত পদক্ষেপ করেছি। শ্রমিকদের বলেছি, কাজ বন্ধ করা যাবে না। পরে শ্রমিকেরা কাজ শুরুও করেন।” দল কি আপনাকে গোলমালে না জড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে? জহরবাবুর জবাব, “আমি কোনও গোলমালে জড়াই না!” অজিতবাবু বলেন, “ওই ব্লকে আহ্বায়ক হিসেবে দু’জনের নাম রাজ্য নেতৃত্বের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতোই জেলায় পদক্ষেপ করা হবে।”