ফেসবুকে পোস্ট মঞ্চের।
যুগলে ছবি পোস্ট। নীচে লেখা কয়েক লাইন। কেউ হাটেঁন স্মৃতির সরণি ধরে। কেউ করেন প্রতিশ্রুতি। ‘ভ্যালেন্টানস ডে’ –তে এমনই ছবি, লেখায় উপচে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়া। তবে কিছুটা হলেও এ ক্ষেত্রে জড়তা দেখা যেত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। এ বার দেখা যাচ্ছে অন্য প্রবণতা।
জড়তা ফেলে সহধর্মিনীদের সঙ্গে ছবি দিয়ে নিজেদের আবেগ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন খড়্গপুর-মেদিনীপুরের শিক্ষকেরাও। অনেকেই এসব দেখে ভ্রু কুঁচকেছেন। কেউ ফেসবুকেই লিখেছেন, “আমাদের কালে প্রেম ছিল চাপা। ছিল না হুজুগে ভ্যালেন্টাইনস জ্বর।” অবশ্য ফেসবুকেই পাল্টা প্রতিক্রিয়াও মিলছে। অনেকের মতে, আধুনিক সমাজের অংশ হিসাবে শিক্ষকরো নিজের মনের আবেগ সকলের সঙ্গে ভাগ করলে ক্ষতি কোথায়!
শিক্ষকদের ফেসবুক পোস্টে অবশ্য দেখা যায়নি ‘ভ্যালেন্টাইনস-ডে’ শব্দটি। এমনকি, অধিকাংশ শিক্ষকের পোস্ট ছিল সংযত ও রুচিশীল। এ দিন ফেসবুকে স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়েছিলেন খড়্গপুর বিধানসভা এলাকার চুয়াডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপকুমার খাঁড়া। ছবির সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা। তুমি পাশে থাকলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়’। সুদীপবাবুর কথায়, “শিক্ষক হিসাবে আমরা নবীনদের পথ প্রদর্শক। তাই এখনও কিছুটা জড়তা রয়েছে বলেই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ শব্দটি লিখতে পারিনি। এমনকি, শালীনতা বজায় রাখা প্রয়োজন মনে করি। কিন্তু আবেগ তো রয়েছে। আমরাও তো এই আধুনিক সমাজের অংশ। তাই আবেগকে সকলের সঙ্গে এভাবেই ভাগ করলাম।” তবে তাঁর ওটুকু পোস্টেই সবটুকু ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি।
ফেসবুকে শিক্ষকদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘিরে সমালোচনা অবশ্য থামেনি। অনেকেই মনে করছেন মুখে এসব কথা না বলাই ভাল। যেমন ফেসবুকের ‘শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’ নামে একটি গ্রুপে হলদিয়ার বাসিন্দা এক শিক্ষকের মন্তব্য সেই ইঙ্গিত করেছে। হলদিয়ার ওই শিক্ষক লিখেছেন, “আমাদের কালে প্রেম ছিল চাপা, ছিল না হুজুগে ভ্যালেন্টাইন জ্বর! ‘ভালবাসি’ মুখে বলিনি কখনো, মনে মনে ভালবেসেছি পরস্পর!!” যদিও এসব ‘সেকেলে’ ভাবনা বলেই দাবি ফেসবুকে ভালবাসার দিনটি ভাগ করে নেওয়া শিক্ষকদের। খড়্গপুরের বাসিন্দা আর্য বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের শিক্ষক রূপেশ বসুও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। লিখেছেন, আজকের দিন শুধু তোমার-আমার’। কোনও বিরূপ মন্তব্যে মাথা ঘামাচ্ছেন না রূপেশবাবু। তিনি বলছেন, “আগের জমানা আর এখনকার মধ্যে ফারাক রয়েছে। নিজেকে যুগের সঙ্গে মানানসই করতে সোশ্যাল মিডিয়া একটি অঙ্গ। এখনকার শিক্ষক হিসাবে আমি যে পোস্ট করেছি তাতে ভ্যালেন্টাইনস ডে হয়তো লিখিনি। কিন্তু যেটুকু লিখেছি তাতে সবটাই স্পষ্ট। শিক্ষক বলে কী ভালবাসার কথা বলতে নেই!”