বিধায়কের ভাঙা গাড়ি। নিজস্ব চিত্র
বিবাদ মীমাংসায় গিয়েছিলেন বিধায়ক। মীমাংসা তো দূর অস্ত্। উল্টে ভাঙচুর করা হল বিধায়কের গাড়ি।
শুধু কি গাড়ি ভাঙচুর! উত্তর কাঁথির তৃণমূলের বিধায়ক বনশ্রী মাইতির উপস্থিতিতে শুরু হল বোমাবাজি। একটি দোকানে দাঁড়িয়ে বিধায়ক দেখলেন, কয়েকজন ভেঙেচুরে তছনছ করছে একের পর এক মোটরবাইক। শুক্রবার রাতে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সরপাই গ্রামে এমনই পরিস্থিতির মুখে পড়লেন বনশ্রী। ঘটনার পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের অভিযোগের তির সিপিএমের দিকে। যদিও সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এটা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রাম্য বিবাদকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগেই সরপাই গ্রামে ঝামেলায় জড়িয়েছিলেন এলাকার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁদের মারধর করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য শুক্রবার সরপাই বাজারে যান বনশ্রীদেবী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কাঁথি-৩ ব্লক এলাকা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য চন্দ্রশেখর মণ্ডল। তাঁরা স্থানীয় একটি দোকানে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী মোটরবাইকে সেখানে আসে। অভিযোগ, এর পরেই এলাকায় বোমাবাজি শুরু হয়। লাঠি দিয়ে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে মারধর করা হয়। বিধায়কের গাড়ি, সরপাই বাজারে রাখা সাত-আটটি মোটরবাইকেও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। একটি মোটরবাইক সরপাই খালেও ফেলে দেওয়া হয়।
বোমাবাজির খবর পেয়ে মারিশদা থানার পুলিশ এলাকায় যায়। তবে ততক্ষণে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। পরে কাঁথি-৩ ব্লক থেকে জেলা পরিষদ সদস্য নন্দদুলাল মাইতি-সহ বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। গভীর রাত পর্যন্ত ওই অবস্থান বিক্ষোভ চলে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবস্থান উঠে যায়।
এই ঘটনায় কোনওরকম আঘাত পাননি বনশ্রীদেবী। তিনি বলেন, “সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ এবং দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, বাম আমলে সরপাই-সহ ভাজাচাউলি এবং কুমিরদা এলাকা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে সেখানে শাসকদলের আধিপত্য। তৃণমূলের অভিযোগ, লোকসভা ভোটের আগে এলাকায় অশান্তি ছড়াতে সিপিএম এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিপিএমের কাঁথি-৩ ব্লক নেতৃত্ব। ব্লকের সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, “এই ঘটনায় সিপিএম যুক্ত নয়। এলাকার সিপিএম নেতারা তো বহুদিন ঘরছাড়া। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।’’ সিপিএম নেতারা জানাচ্ছেন, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল হয়েছিল। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়েছিল। তার পর থেকেই এলাকায় শাসকের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে রেষারেষি চলছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’ রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির মন্তব্য, ‘‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছু শুনিনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’’
ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’