অ্যাসিড হানায় ভয়ে ময়নার গ্রাম

রাজ্যের নানা প্রান্তে মহিলারা বারবার অ্যাসিড হামলার শিকার হলেও পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকায় এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় তাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে আরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ময়না শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:২৪
Share:

ধৃত দু’জন। নিজস্ব চিত্র

ভরসন্ধেয় প্রকাশ্য রাস্তায় অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছে মাঝবয়সী এক মহিলা। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনা ময়নার গ্রামটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ময়না বাজারে নিত্য যাতায়াত করেন গ্রামবাসী। মহিলারা হেঁটে বা সাইকেলে এই রাস্তাতেই চলাফেরা করেন। ফলে, অ্যাসিড হামলার ঘটনা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

Advertisement

ঘটনাস্থলের কাছেই বাড়ি মিঠু বাড়ইয়ের। বিবাহিত মিঠুদেবী বলছিলেন, ‘‘আমরা তো এই রাস্তা দিয়েই ময়না বাজারে যাই। গ্রামের এই রাস্তায় আলোও নেই। যে ভাবে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনা ঘটল, তাতে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছি।’’ গ্রামের আর এক মহিলা মনীষা বর্মনেরও বক্তব্য, ‘‘রাত-বিরেতে ওই রাস্তাতেই তো যাতায়াত করতে হয়। ফলে, ভয় তো করবেই।’’ ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দোলই বলেন, ‘‘ময়না বাজারে আলোর বন্দোবস্ত হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাতেও আলো দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি মানছেন, ‘‘সব জায়গায় আলো দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয়রা উদ্যোগী হলে আমরা সাহায্য করতে পারি।’’

রাজ্যের নানা প্রান্তে মহিলারা বারবার অ্যাসিড হামলার শিকার হলেও পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকায় এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় তাই আতঙ্ক ছড়িয়েছে আরও বেশি। গ্রামের বৃদ্ধ গৌরহরি বাড়ুইয়ের কথায়, ‘‘অন্য এলাকায় ঘটনা ঘটছে শোনা, আর নিজের এলাকায় সেই ঘটনা ঘটার মধ্যে তো ফারাক রয়েছে। গ্রামের মধ্যে অ্যাসিড হামলায় তাই আমরা উদ্বিগ্ন।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় জখম বছর বিয়াল্লিশের মহিলা এখনও তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিমাই দোলাইকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে নিমাইয়ের সঙ্গী আব্দুল মান্নাকেও। ধৃতদের শনিবার তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনকেই ৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই মহিলার সঙ্গে নিমাইয়ের বেশ কয়েক বছরের আলাপ। পরস্পরের বাড়িতেও যাতায়াত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি মহিলার ছেলে এই সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারপর মহিলাও নিমাইকে জানিয়ে দেন, তিনি আর তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না। সেই আক্রোশেই নিমাই মহিলার উপর অ্যাসিড হামলা চালিয়েছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।

পুলিশ সূত্রে খবর, পেশায় গাড়ি চালক নিমাই গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত সালফিউরিক অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালিয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ধৃতদের বিরুদ্ধে অ্যাসিড নিয়ে হামলা ও খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণও মিলেছে। দ্রুত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন