শুকনো-পাতায়: বাঘ কোথায় ঘাপটি মেরে, মেলেনি খোঁজ। বাঘের জন্য পাতা খাঁচার কাছেই লেগেছে আগুন। মেলখেরিয়ার জঙ্গলে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
চাপা ভয় ঘিরে রেখেছে গোটা গ্রামটাকে। বিকেলের পরে কেউ আর বাড়ি থেকে তেমন বেরোচ্ছেন না। নিতান্ত প্রয়োজনে বেরোলেও হাতে থাকছে মোটা ডাঙ (লাঠি)। শিকেয় উঠেছে কচিকাঁচাদের খেলাধুলোও।
ছবিটা মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়ার শিয়ারবনির। রবিবার সন্ধ্যায় এই গ্রামেই বাঘ এসেছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। লক্ষ্মী মাহাতো, বন্দিরাম মাহাতোরা দোরগোড়ায় বাঘ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপর থেকেই সিঁটিয়ে রয়েছে শিয়ারবনি। যদি ঘাড়ে এসে পড়ে থাবা!
রোজ বিকেলে শিয়ারবনির মাঠে ক্রিকেট খেলে ইন্দ্রজিৎ মাহাতো, সুমন্ত মাহাতো, বিকাশ মাহাতোরা। সোম-মঙ্গল তারা আর মাঠমুখো হয়নি। ব্যাট-বলও ঘরবন্দি। বছর বারোর ইন্দ্রজিৎ বলছিল, “আর ক্রিকেট! সুন্দরবনের বাঘ এখন শিয়ারবনিতে। আমরা ভয়েই মরছি।” সুমন্ত, বিকাশদের কথায়, “হাতিকে অতটা ভয় নেই। হাতি তো কত দেখেছি। কিন্তু বাঘের নাম শুনলেই কাঁটা হয়ে যাচ্ছি।” পরপর গবাদি পশু আক্রান্ত হওয়ায় হানাদারের হদিস পেতে ক্যামেরার ফাঁদ পাতা হয়েছিল লালগড়ের জঙ্গলে। মেলখেরিয়ার জঙ্গলের ক্যামেরায় বন্দি হয় বাঘের ছবি। তারপর ধেড়ুয়ার এই এলাকার বড় বড় অজস্র পায়ের ছাপ মিলেছে। ছাপগুলো বাঘের বলেই অনুমান। পরিস্থিতি দেখে শিয়ারবনিতে ক্যামেরা এবং খাঁচা পাতার তোড়জোড় শুরু করেছে বন দফতর। বন দফতরের এক সূত্রে খবর, বাঘ ধরতে ধেড়ুয়ার জঙ্গলে দু’টি খাঁচা পাতা হতে পারে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “শিয়ারবনিতে খাঁচা পাতার চেষ্টা চলছে। ক্যামেরাও লাগানো হতে পারে।” মঙ্গলবার লালগড়ের ভাউদির জঙ্গলে নতুন করে একটি খাঁচা পাতা হয়েছে।
এখন বাঘ না- ধরা পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। দিন যত গড়াচ্ছে, নতুন নতুন এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ধেড়ুয়া থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে লোহাটিকরি। দুপুরে ছাগল চরাতে বেরিয়ে রঞ্জন মাহাতো বলছিলেন, “ধেড়ুয়ায় বাঘ এসেছে বলে শুনেছি। আতঙ্কে আছি।” রবিবার সন্ধ্যায় শিয়ারবনির লক্ষ্মী মাহাতো বাঘ দেখেছেন বলে দাবি। লক্ষ্মী বলেন, “গ্রামে চাপা ভয় আছে। নিজেদেরও বাইরে বেরোতে ইচ্ছে করছে না। গরু-বাছুরও কেউ বাড়ির বাইরে ছাড়ছে না।”
এত ভয়ের মধ্যেও স্বস্তি একটাই— লালগড়ের জঙ্গলে হাতির যে দল দাপাদাপি জুড়েছি, সেই দলটি সোমবার রাতে লালগড় ছেড়ে ঝাড়গ্রামের মালাবতীর জঙ্গলে চলে গিয়েছে। ফলে, বাঘ যদি লালগড়ের জঙ্গলে থেকে থাকে, তাহলে আর হাতির মুখোমুখি হতে হবে না। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা মানছেন, “হাতির দলটি লালগড়ের জঙ্গল ছেড়েছে।” বন দফতরের ধারণা, সম্ভবত হাতির দলের তাড়া খেয়েই বাঘটি ধেড়ুয়ার শিয়ারবনিতে চলে এসেছিল।
কিন্তু এখন বাঘটি কোথায়? মেদিনীপুরের এক বনকর্তার কথায়, “সেটা লাখ টাকার প্রশ্ন! জঙ্গলেই রয়েছে। কিন্তু কোন জঙ্গলে, তা বলা মুশকিল।” লালগড়ের পাশাপাশি এখন ধেড়ুয়ায় নজরদারি শুরু করেছে বন দফতর।
মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ধেড়ুয়ার জঙ্গলেও নজরদারি রয়েছে। গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে, দিনের বেলায়ও খুব সাবধানে চলাচল করতে হবে। এখন জঙ্গল এড়িয়ে চলাই ভাল।”