গাজন উৎসবে গুলি, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

গাজন উৎসবে বচসার জেরে এক ব্যাক্তিকে গুলি করার অভিযোগ উঠল যুব তৃণমূলের বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকেও। বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুর গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যালে জখম কেবল দোলই।

গাজন উৎসবে বচসার জেরে এক ব্যাক্তিকে গুলি করার অভিযোগ উঠল যুব তৃণমূলের বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে। পরে অভিযুক্তকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জনতার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় পুলিশকেও। বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুর গ্রামের ঘটনা।

Advertisement

গুলিবিদ্ধ কেবল দোলুইকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সিদ্ধার্থ অধিকারী ওরফে বাবুয়া গুরুতর আহত অবস্থায় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার সূত্রপাত পয়লা বৈশাখের দিন। বুধবার কুঁয়াপুরে গাজনের মেলায় সদলবলে গিয়েছিল কুঁয়াপুর বুথের যুব তৃণমূল সভাপতি সিদ্ধার্থ। অভিযোগ সেখানে গায়ে গরম জল পড়াকে কেন্দ্র করে সে দিনই একপ্রস্থ ঝামেলা হয়। তবে তা মিটে যায় প্রাথমিকভাবে। বৃহস্পতিবার ছিল গাজনের ভক্তাদের খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান।

এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ উৎসব চত্বরে ফের হাজির হয় সিদ্ধার্থ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সিদ্ধার্থ মদ্যপ অবস্থায় বচসা বাধায় উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা কেবল দোলুইয়ের সঙ্গে। প্রথমে দাবি করে তাকেও খেতে দিতে হবে। কিন্তু কেবল জানান, খাওয়া শুধু ভক্তাদের জন্য। তাছাড়া খাবার শেষও হয়ে গিয়েছে। তারপরেই সিদ্ধার্থ আগের রাতের ঘটনা তুলে দাবি করে তার গায়ে গরম জল পড়ার সময় উপস্থিত ছিল পাশের আসকান্দা গ্রামের দুই যুবক। তাঁদের সিদ্ধার্থর হাতে তুলে দিতে হবে। বচসা চলার সময় আচমকাই নিজের পকেট থেকে রিভলবার বের করে গুলি চালায় সে। গুলি লাগে কেবলের পায়ে। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে আসকান্দা গ্রামের দিকেই পালাতে থাকে সিদ্ধার্থ। কিন্তু গ্রামের বাসিন্দারা তাকে ধরে ফেলে বেধড়ক মারধর করে। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। অন্যদিকে সিদ্ধার্থ বাড়িতে চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার বাবা, মা, স্ত্রী ও বোনেদের আটকে রেখে চলে বাড়ি ভাঙচুর। ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্তা। সিদ্ধার্থর পরিবারকে উদ্ধার করতে গেলে বাসিন্দাদের হাতে নিগৃহীত হতে হয় পুলিশকেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সিদ্ধার্থ সারাদিন দাদাগিরি করে বেড়ায় এলাকায়। বোমাবাজি, গুলি চালানো তার কাছে স্বাভাবিক ঘটনা। এ দিন এক নিরপরাধ হাতে গুলিবিদ্ধ হল। পুলিশ কিছু করতে পারে না। অথচ সিদ্ধার্থর পরিবারে নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার পুলিশ এল কেন?

তবে গোটা ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘গাজনের মেলাতে গণ্ডগোলের জেরে গুলি চলেছে। গুলিবিদ্ধ যুবকের চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে অভিযুক্ত যুবকও হাসপাতালে। গোটা ঘটনায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই।’’

এ দিকে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অমিতাভ কুশারী বলেন, ‘‘গুলি চলেছে বলে শুনেছি। বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে অভিযু্ক্ত যুবক আমাদের সমর্থক বলে শুনেছি।’’ অন্যদিকে পুরভোটের আগেই তৃণমূল নেতার বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ চন্দ্রকোনা পুর এলাকার উপান্তে কুঁয়াপুরের এই ঘটনা আসলে বলে দিচ্ছে ঠিক কেমন পরিস্থিতিতে রয়েছে এলাকা।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন