তৈরি হয়নি কমিটি, জল প্রকল্পে সঙ্কটের আশঙ্কা

পানীয় সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ‘ভিলেজ ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’ (ভিডব্লুএসসি) গঠন করা জরুরি। কমিটির চেয়ারপার্সনের সই ছাড়া নতুন প্রকল্প তৈরি বা প্রকল্পের সম্প্রসারণ, কিছুই করা যাবে না। বারবার এ কথা বলা সত্ত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটিই তৈরি করতে পারল না। কোথাও কোথাও কমিটি তৈরি হলেও বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বৈধতা দেওয়া হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০০:১৭
Share:

পানীয় সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ‘ভিলেজ ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’ (ভিডব্লুএসসি) গঠন করা জরুরি। কমিটির চেয়ারপার্সনের সই ছাড়া নতুন প্রকল্প তৈরি বা প্রকল্পের সম্প্রসারণ, কিছুই করা যাবে না। বারবার এ কথা বলা সত্ত্বেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটিই তৈরি করতে পারল না। কোথাও কোথাও কমিটি তৈরি হলেও বৈঠকের মাধ্যমে তাকে বৈধতা দেওয়া হয়নি। ফলে, ভবিষ্যতে গ্রামে গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জল প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরীর অবশ্য দাবি, “অনেক গ্রাম পঞ্চায়েতেই কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটির কাজ কী বোঝাতে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তবে এটা ঠিক কমিটিগুলি এখনও সে ভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

এখনও গ্রামে গ্রামে আন্ত্রিকের প্রকোপ দেখা যায়। ম্যালেরিয়াতেও মৃত্যু হয় মানুষের। এ ছাড়া, পরিস্রুত পানীয় জল পান না করায়, শৌচাগার ব্যবহার না করায় নানা রোগ ছড়ায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দু’টি বিভাগের নজরদারি করার কথা। প্রথমটি স্বাস্থ্য দফতর, আর দ্বিতীয়টি হল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি বিভাগ। দু’টি বিভাগ এ বিষয়ে তত্‌পর হলেও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে তেমন তত্‌পরতা লক্ষ করা যায়নি। কয়েক মাস হল জনস্বাস্থ্যের প্রতিটি বৈঠকেই দু’টি বিভাগের আধিকারিকেরা বারবার ‘ভিডব্লুএসসি’ তৈরির উপর জোর দিয়েছেন। উপস্থিত পঞ্চায়েত প্রধানেরাও কমিটি তৈরি করবেন বলে জানিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। পরের বার দেখা গিয়েছে, কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতই উপযুক্ত পদ্ধতিতে কোনও প্রস্তাব জমা দিতে পারেনি। ফলে জনস্বাস্থ্য ও কারগরি দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ সেন চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন জেলা পরিষদকে। জেলা পরিষদের সচিব দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ও প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিয়ে চিঠি করেছেন। চিঠিতে উভয়েই পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনও প্রস্তাবই গৃহীত হবে না। তা সত্ত্বেও এখনও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর জানিয়েছে, জেলা যদি রাজ্যকে কোনও প্রস্তাব পাঠায় তাহলে ‘ডিস্ট্রিক্ট ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’র প্রধান হিসাবে সভাধিপতির সই করিয়ে পাঠান। তেমনই জেলা যে সব প্রকল্প গ্রহণ করবে তাতে অবশ্যই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের কমিটির প্রধান হিসাবে পঞ্চায়েত প্রধানের সই থাকার কথা। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এখনও বিধায়ক বা জন নেতারা ব্যক্তিগত ভাবে প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন। যাতে সেই সব প্রকল্প মঞ্জুর করা হয় তার জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু এ ভাবে তো আর করা যাবে না। এটা বুঝিয়ে পারছি না। ফলে সমস্যা হচ্ছে।”

কিন্তু কেন কমিটি তৈরি করা যায়নি? কমিটিতে ৬-১২ জন সদস্য থাকার কথা। যেখানে মহিলা সদস্য রাখার উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সদস্য থেকে স্থানীয় যোগ্য ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া যায়। কিন্তু কমিটির সদস্য কাকে করা হবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি তা করে উঠতে পারছে না বলেই অভিযোগ।

Advertisement

বর্তমানে শৌচাগার নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই কাজও দেখভাল করার কথা এই কমিটির। কিন্তু কমিটিই যদি না হয় তাহলে দেখভাল করবে কে! ফলে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পও থমকে রয়েছে জেলায়। জেলা পরিষদের অবশ্য দাবি, এ ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েগুলিকে পদক্ষেপ করার জন্য এ বার চাপ সৃষ্টি করা হবে। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত বৈঠকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, এক মাসের মধ্যে সব কমিটি গঠন করার কাজ শেষ করে দিতে হবে। না হলে গ্রীষ্মে কোনও এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিলে বিপাকে পড়তে হবে সেই গ্রাম পঞ্চায়েতকে। কাজ কতটা হবে তা অবশ্য সময়েই বোঝা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement