প্রতিবাদ: মহিলাকে হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
প্রথমে তিনি বলেছিলেন দল কী ব্যবস্থা নেয় আগে দেখবেন। সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে পুলিশে অভিযোগ জানালেন হেনস্থার শিকার কবিতা দাস। মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতীর বাগডুবি গ্রামের এই তৃণমূল কর্মীকে দলেরই কিছু লোকজন গলায় জুতোর মালা পরিয়ে কান ধরে ওঠবোস করিয়েছেন এবং গ্রামে ঘুরিয়েছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের বুথ সভাপতি আশিস পাত্র-সহ তিনজনের নামে শনিবার রাতে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানিয়েছেন ওই মহিলা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হবে।’’ তবে পুলিশের দাবি, অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজ চলছে। ঘটনার পরে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যা দেখে কবিতা বলছেন, “গ্রামে পুলিশ থাকায় একটু নিশ্চিন্তে আছি।”
রবিবার কবিতার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলে ছিলেন জেলা কংগ্রেস নেতা শান্তি দত্ত। শান্তিবাবু বলেন, “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে যে মহিলারা নিরাপদ নন, এ ঘটনা তারই আরেক উদাহরণ।” কবিতাকে আইনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে কংগ্রেস। হেনস্থায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মেদিনীপুরে গাঁধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছে কংগ্রেস। ছিলেন দলের জেলা সভাপতি সমীর রায়। কবিতার সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপি নেতারাও। গিয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশ। শমিতবাবু বলেন, “এমন কাজ তৃণমূলের লোকেদের পক্ষেই করা সম্ভব।” ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে সিপিএমও।
কবিতাদেবীর স্বামী, এলাকার বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল দাস বলেন, “অনেকে বাড়িতে এসে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। কংগ্রেস এসেছিল। বিজেপি এসেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূল করি। আমি এখনও তৃণমূলেরই কর্মী। স্ত্রীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। দলের কয়েকজনই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা আরও খারাপ লাগছে।”
সব মিলিয়ে এই ঘটনায় মেদিনীপুরে যে নিন্দার ঝড় উঠেছে, তাতে অস্বস্তিতে তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, “এই ঘটনা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।” তবে মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির আশ্বাস, “দলও এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নেবে।”
রবিবার দিনভর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা। ঠিক কী ঘটেছিল তা জানবেন তাঁরা। শুক্রবার বিকেলের ওই ঘটনার ছবি শনিবার প্রকাশ্যে আসায় শোরগোল পড়ে। তারপর এ দিন তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই এলাকায় ছিলেন না। কবিতার স্বামী গোপাল দাস গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাগডুবি থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন। কিন্তু এ বার আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তিনি আর লড়েননি। তবে তৃণমূলের মহিলা প্রার্থীই জিতেছেন। তারপরেও নির্দলকে সমর্থন করেছেন, এই সন্দেহে কবিতাকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
সব দেখে তৃণমূলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “দলটা প্রচুর আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। এই সব আবর্জনা থেকে গেলে দলেরই বিপদ।”