পাল্টা মার দিতে তৈরি দাঁতালরা

জঙ্গলমহলে হাতির হানার বিগত ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণের পরে বন দফতরের অন্দরে এমন সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম এলাকায় দলমার এবং স্থানীয় হাতিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অভিজ্ঞ বনকর্মীরা বলছেন, তাড়া খেয়ে পালানোর দিন হয়তো শেষ হতে চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৭
Share:

দাপাচ্ছে দাঁতালেরা। ফাইল চিত্র

বুনো হাতির স্বভাব কি পাল্টাচ্ছে? তারা কি প্রতিশোধ নিতে শিখছে? আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে?

Advertisement

জঙ্গলমহলে হাতির হানার বিগত ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণের পরে বন দফতরের অন্দরে এমন সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম এলাকায় দলমার এবং স্থানীয় হাতিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে অভিজ্ঞ বনকর্মীরা বলছেন, তাড়া খেয়ে পালানোর দিন হয়তো শেষ হতে চলেছে। উল্টে হাতিরা জবাব দিতে তৈরি। সে জন্যই বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে গৌরী মান্ডি, মোহন বিন্ধ্যাণীদের।

হাতি ও জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘাত বহুগুণ বেড়েছে। হাতিরাও পাল্টা প্রতিরোধের পথে যাচ্ছে। এ রকম চললে আগামীতে জঙ্গলমহলে বন্যপ্রাণ ও মানুষের সংঘাত তীব্র হবে। যার মাসুল দিতে হতে পারে নিরীহ গ্রামবাসীকে।

Advertisement

দলমার পালের প্রিয় জায়গা নয়াগ্রাম ব্লক এলাকা। বিশেষত, নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখার তীরবর্তী অঞ্চলগুলি ভীষণ পছন্দ হাতিদের। নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর আখ ও মরসুমি আনাজ চাষ হয়। হাতিরা তাই বছরে বেশ কয়েক বার ন‌য়াগ্রামে যায়। আগে ওড়িশার সীমানা ‘সিল’ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ওড়িশা বন বিভাগের বিরুদ্ধে। ফলে, স্বাভাবিক গতিপথে বাধা পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে দলমার পাল। গত কয়েক বছরে ক্ষয়ক্ষতির বহর বাড়ে। শেষে সমন্বয় বৈঠকে জট কাটে। ওড়িশা বন দফতর ‘সিল’ তুলে নেওয়ায় এখন হাতিরা নির্দিষ্ট গতিপথে যাতায়াত করছে। তবে দলমার পাল মূলত, ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে নেমে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ঘুরে বেড়ায় নয়াগ্রামের ঘন জঙ্গলে কিছুদিন কাটিয়ে হাতিরা ওড়িশার দিকে যায়। সেখানে কিছুদিন কাটিয়ে তারা আবার নয়াগ্রামে ফিরে আসে। তবে গত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের দলমায় স্বাভাবিক বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাতিরা আর সেখানে ফিরতে চায় না। হুলাপার্টি দিয়ে জোর করে ঠেলে পাঠালেও হাতিরা ফিরে আসছে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে।

এ দিকে, দেড়শো-দু’শো হাতি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়ানোয় চাষিদের সর্বনাশ। মাঠের পর মাঠ ফসল উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ঘরদোর ভেঙে তছনছ করছে হাতিরা। মানুষ মরছে। কিছু নিঃসঙ্গ হাতি আবার রেসিডেন্ট হয়ে এলাকায় থেকে যাচ্ছে। তারপর জঙ্গলে হাতিদের খাবারে টান পড়ায় তারা লোকালয়মুখী হচ্ছে। খড়্গপুরের ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে নির্দিষ্ট সময়ে দলমার পাল আসত। কয়েক মাস বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দলমায় ফিরে যেত। এখন কার্যত সারা বছর দলমার পাল এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাতি-মানুষের সংঘাতের জায়গাটা আরও তীব্রতর হচ্ছে।’’

বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতিদের লোকালয় থেকে দূরে রাখতে অযথা তাদের উত্ত্যক্ত করা বা আঘাত করা বন্ধ করতে হবে। হাতি বুদ্ধিমান প্রাণি। তাই তারাও পাল্টা হামলা করতে শিখছে। কিছুদিন আগে নয়াগ্রামের একটি গ্রামে গৌরী মাণ্ডি নামে এক বৃদ্ধা উঠোন ঝাঁট দেওয়ার সময় সেখানে চড়াও হয়ে তাঁকে পিষে মারে দলমার পালের একটি দাঁতাল। জঙ্গলপথে দিনের বেলা সাইকেলে যাওয়ার সময় মোহন বিন্ধ্যানী নামে এক বৃদ্ধকে আছড়ে ফেলে পিষে মারে রেসিডেন্ট হাতি। বন দফতরের বক্তব্য, এখন সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। সতর্কতামূলক প্রচারে যা বলা হচ্ছে তা মানতে হবে। না হলে আগামী দিনে সংঘাত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন