বিরাট কোহলি। ছবি: পিটিআই।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের পরেও তাঁকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে সব জবাব দিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি। বুঝিয়ে দিলেন, এক দিনের বিশ্বকাপে সবার আগে তাঁর নামটাই থাকা উচিত। জানিয়ে দিলেন, গত ২-৩ বছরের সেরা ফর্মে রয়েছেন। ব্যাট ধরলেন রোহিত শর্মার হয়েও। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ের সেরা শতরান হিসাবে বেছে নিলেন রাঁচীর ইনিংসকে।
শনিবার হয়তো শতরান পাননি কোহলি। কিন্তু যে ভাবে খেলছিলেন তাতে লক্ষ্যমাত্রা বেশি হলে শতরান পেয়েও যেতেন। ম্যাচের পর কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল তাঁকে। পরে সেই আলোচনায় যোগ দেন কেএল রাহুল এবং যশস্বী জয়সওয়াল। মাঝে কোহলি ফোনেও কথা বললেন। ও পারে হয়তো স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা ছিলেন।
সিরিজ় সেরার পুরস্কার নিতে এসে কোহলি বললেন, “সত্যি বলতে, যে ভাবে এই সিরিজ়ে খেলেছি তাতে খুবই তৃপ্ত। গত ২-৩ বছরে এত ভাল খেলেছি বলে মনে পড়ছে না। অনেক খোলা মনে খেলতে পারছি। গোটা ম্যাচে কেমন খেলব আগে থেকে ভেবে নিতে পারছি। ধীরে ধীরে ইনিংস তৈরি করছি। ক্রিকেটার হিসাবে বরাবর একটা জিনিস করার চেষ্টা করেছি। তা হল, নিজের যে মান নির্ধারণ করেছি তা ধরে রাখা এবং এমন ভাবে খেলা যাতে দলে প্রভাব ফেলতে পারি। আমি জানি ক্রিজ়ে নেমে এ ভাবে ব্যাট করতে পারলে সেটা দলকে সাহায্য করবে। কারণ আমি লম্বা সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে পারি। আত্মবিশ্বাসী থাকলে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, ক্রিজ়ে নেমে তা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আমার। দলের জন্য সেরাটা দেওয়াই আমার কাজ।”
সঞ্চালক মুরলী কার্তিক প্রশ্ন করেন, বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদেরও কখনও না কখনও খারাপ সময় গিয়েছে। আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছে। কোহলির কি সে রকম কোনও দিন হয়েছে? বিরাট উত্তর দেন, “অবশ্যই হয়েছে। ১৫-১৬ বছর ধরে খেললে এমন সময় আসবেই যখন আপনি নিজের দক্ষতাকে সন্দেহ করবেন। বিশেষ করে একজন ব্যাটারের ক্ষেত্রে আরও প্রযোজ্য। কারণ একটা ভুল সব শেষ করে দিতে পারে। আপনি ভাবতে থাকেন, হয়তো আপনি আর ভাল খেলতে পারবেন না। সব কিছু আবেগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আসলে এটাই খেলাটার সৌন্দর্য। ব্যাটিং এমন একটা দক্ষতা যেখানে সব ভয় কাটিয়ে নামতে হয়। প্রতিটা বল খেলার আগে, প্রতিটা লম্বা ইনিংস খেলার আগে আপনাকে এমন একটা মানসিক অবস্থায় নিজেকে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে প্রত্যেক বলের আগে আপনি আত্মবিশ্বাসী থাকবেন। তাই গোটা যাত্রাপথেই অনেক কিছু শেখা যায়। নিজেকে চেনা যায় এবং ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।”
কোহলিরস সংযোজন, “আমি নিজেকে চিনতে শিখে গিয়েছি। কখন আমার মাথায় নেতিবাচক ভাবনাচিন্তা আসতে পারে, কখন আত্মবিশ্বাস কম থাকে, কখন নিজের মতো থাকতে পারি এ সব ছোটখাটো ব্যাপার জানি। এতে মানুষ হিসাবে আপনার উন্নতি হয়। মানসিক ভাবে এমন জায়গায় থাকতে পারেন যে বছরের পর বছর ধরে জীবনে ভারসাম্য রাখা সম্ভব। এমন অনেক সময় গিয়েছে যখন নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হয়েছে। স্বীকার করতে লজ্জা নেই। এত দিন খেললে যে কোনও মানুষেরই এটা হতে পারে। তবে এখনও যে দলের হয়ে অবদান রাখতে পারি, এটা ভেবেই আমি আপ্লুত।”
৬৫ রানের ইনিংসে কোহলি এ দিন তিনটি ছয় মেরেছেন। তার মধ্যে চর্চা হচ্ছে ‘নো লুক সিক্স’ নিয়েও। কার্তিক জানান, কোহলি এখন ‘সিক্স হিটিং চিকু’ হয়ে গিয়েছেন। হাসতে হাসতে কোহলি বলেন, “স্বাধীন ভাবে খেলতে পারলে ছয় মারতে পারি, এই বিশ্বাস আছে আমার। ক্রিজ়ে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। একটু ঝুঁকি নিতে চেয়েছিলাম। নিজেকে আরও একটু বেশি চাপ দিয়েছিলাম। আসলে পরের ধাপে যেতে গেলে একটু ঝুঁকি নিতেই হয়।”
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে তিন ইনিংসে তিনশোর উপর রান করেছেন কোহলি। প্রথম বার তিন ম্যাচের সিরিজ়ে এই কীর্তি অর্জন করলেন। নিজের সেরা ইনিংস সম্পর্কে কোহলি বলেছেন, “রাঁচীর ইনিংসটাই বেছে নেব। অস্ট্রেলিয়ায় খেলে আসার পর অনেক দিন খেলিনি। মাঠে নেমেই ভাল শট খেলতে পেরে আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম, আমার শক্তি কোথায়। ঝুঁকি নেওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস দরকার। সেটা পেয়ে গেলে নিজেকে আর একটু চাপ দেওয়া যায়। রাঁচীর ইনিংস সত্যিই আমার কাছে বিশেষ অনুভূতি। ওই ইনিংস খেলার পর বুঝতে পেরেছিলাম অনেক দিন এ রকম খেলিনি। তিনটে ম্যাচ যে ভাবে খেলেছি তাতে আমি তৃপ্ত।”
কোহলির পাশাপাশি রোহিতও এই সিরিজ়ে ভাল খেলেছেন। প্রথম এবং তৃতীয় ম্যাচে অর্ধশতরান করেছেন। দলের অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারের ফর্মে থাকার প্রসঙ্গে কোহলি বলেছেন, “আসলে এ ধরনের ম্যাচ আমাদের দু’জনের থেকেই সেরা বার করে আনে। বছর বছর এমনই হয়েছে। এ জন্যই আমরা ক্রিকেট খেলি। সিরিজ় ১-১ হোক অবশ্যই চাইনি। কিন্তু ১-১ হওয়ার পর সিরিজ় নির্ণায়ক ম্যাচে নামলে একটা আলাদা উত্তেজনা হয়ই। আজ ভাল খেলতে এবং ছাপ রাখতে চেয়েছিলাম। দলের হয়ে অবদান রাখতে সব সময়েই ভাল লাগে। এত বছর ধরে সেটা করতে পেরেছি বলেই এত দিন খেলছি। দু’জনেই বিশ্বাস করি, দলের প্রয়োজন অনুযায়ী খেলতে হবে। নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে খেলার চেষ্টা করি। দু’জনের জন্যই আমি খুশি। আগামী দিনেও এই কাজই করতে চাই।”