হামলায় রক্তাক্ত দশ

আঁচড়ে, কামড়ে ধরা পড়ল নেকড়ে

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সাতসকালে মাসাংডিহির জঙ্গলের দিক থেকে নেকড়েটি প্রথমে ঢুকে পড়েছিল শিমূলডাঙা গ্রামে। সকাল ছ’টা নাগাদ ঘরের উঠোন নিকোচ্ছিলেন তরুণী মালিনী মাহাতো। তাঁর মুখমণ্ডল ও ঘাড় কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় নেকড়েটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০০
Share:

ধরা পড়ার পরে নেকড়েটি।জখম ধীরেন মাহাতো(ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

দিনভর ঝাড়গ্রামের সাতটি গ্রামে হানা দিয়ে দশজনকে কামড়ে অবশেষে ধরা পড়ল নেকড়ে। সন্ধ্যায় তার ঠাঁই হল ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায়।

Advertisement

সেখানে পশুচিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করলেন।

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সাতসকালে মাসাংডিহির জঙ্গলের দিক থেকে নেকড়েটি প্রথমে ঢুকে পড়েছিল শিমূলডাঙা গ্রামে। সকাল ছ’টা নাগাদ ঘরের উঠোন নিকোচ্ছিলেন তরুণী মালিনী মাহাতো। তাঁর মুখমণ্ডল ও ঘাড় কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় নেকড়েটি। মালিনীকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর প্রতিবেশী ধীরেন মাহাতো। মালিনীকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি থেকে পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতায়।

Advertisement

গ্রামবাসীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তেড়ে এলে নেকড়েটি শিমূলডাঙা থেকে কুণ্ডলডিহি গ্রামের দিকে পালায়। সেখানে জখম হন কুণ্ডলডিহি গ্রামের বাসিন্দা বকুল মাহাতো। এরপর সাড়ে সাতটা নাগাদ পসরো গ্রামের ফটিক হেমব্রমের বাঁ হাতে কামড়ে দেয় নেকড়েটি। কোনওমতে নেকড়েটিকে লাথি মেরে প্রাণে বাঁচেন ফটিক। সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ জারুলিয়া গ্রামে ঢুকে বৃদ্ধ ভূষণচন্দ্র মাহাতোরমুখ ও ঠোঁট কামড়ে ফালা করে দেয় নেকড়েটি। জারুলিয়া গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলের মিড ডে মিল রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত পার্বতী সিংহ একটি বাঁশ ঝাড়ের কাছে জ্বালানি সংগ্রহ করছিলেন। নেকড়েটি তাঁকেও বুকে কামড়ে দেয়। সাড়ে ন’টা নাগাদ ঘৃতখাম গ্রামে ঢুকে পড়ে নেকড়েটি। ওই সময় গ্রামের বধূ বালিকা মাহাতো ও প্রবীণা সুশীলা মাহাতো জঙ্গলে শালপাতা তুলছিলেন। তাঁদেরও মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করে দেয় নেকড়েটি।

পর পর এমন হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়েন এলাকাবাসী ও বন দফতরের আধিকারিকরা। নেকড়েটিকে ধরার জন্য ঘটিডুবা ও কেঁউদিশোলের মাঝে খাঁদায় মুরগি দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। কিন্তু নেকড়েটি বিকেলে ঘটিডুবা গ্রামের সুজলা সিংহের উপর চড়াও হয়ে তাঁর কপালে ও মুখের বাঁদিকে কামড়ে দেয়। কেঁউদিশোল গ্রামে নেকড়েটি ঢুকে পড়লে গ্রামবাসীরা তাড়া করেন। ওই সময় স্থানীয় দিঘির পাড়ে ছাগল চরাচ্ছিলেন বুধুরাম মাহালি। তাঁর বাঁ হাত কামড়ে ধরেছিল নেকড়েটি। বুধু বলেন, ‘‘আমি সঙ্গে সঙ্গে ডান হাতে নেকড়েটার গলা চেপে ধরি। যাতে কামড়াতে না পারে। আমি সর্বশক্তি দিয়ে নেকড়েটাকে চেপে মাটিতে শুইয়ে রাখার চেষ্টা করতে থাকি। হাত দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু সেদিকে খেয়াল ছিল না। শেষ কালে ওই অবস্থায় নেকড়েটার উপর চেপে শুয়ে পড়ি।’’ এরপরই ছুটে আসেন বাসিন্দারা। নেকড়েটিকে কব্জা করে বেঁধে ফেলেন তাঁরা।

বন দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামের জঙ্গলে নেকড়ে সংখ্যা বাড়ছে। খাবারের সন্ধানে প্রায়ই তারা হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। কিছুদিন আগে জামবনির বড়শোল গ্রামে নেকড়ের হানায় জখম হন দুই যুবক। পরে একজনের মৃত্যু হয়। এ বার আহত হলেন দশজন। তাঁদের মধ্যে তিনজন মহিলা।

প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘এই সময়ে জঙ্গলে খাদ্য সঙ্কট দেখা যায়। সঙ্কট দেখা যায় বাসস্থানের ক্ষেত্রেও। নেকড় খাবারের খোঁজেই লোকালয়ে ঢোকে। তাদের তাড়া করলেই নেকড়েরা আত্মরক্ষায় আক্রমণ করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন