আলোচনা: মেদিনীপুর কলেজে কর্মশালার একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
যে কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন হয়, সেটাই কাজ। আর হেঁশেল সামলানো, ঘরদোর পরিষ্কার, কাপড় কাচার মতো কাজ নেহাতই সাধারণ। তাই চাকুরিরতা মহিলারা ‘কাজ করেন’, আর গৃহবধূরা ‘কিছু করেন না’— সাধারণভাবে এমনটাই বলতে আমরা সকলে অভ্যস্ত। এই ধারণা ভাঙতেই বৃহস্পতিবার দু’দিনের এক কর্মশালা শুরু হল মেদিনীপুর কলেজে। ‘লিঙ্গ সাম্যে’র ভাবনা সামনে রেখে এই কর্মশালার উদ্যোক্তা কলেজের মহিলা সেল আর ‘এবং আলাপ’ নামে কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
এ দিন গ্রুপ ডিসকাসনের বিষয় ছিল, অচেনা বন্ধুর মায়ের কথা। অন্য বিভাগের বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে তার মায়ের সম্পর্কে দু’চার কথা বলতে হয়েছে ছাছাত্রীদের। অনেকেই চিরাচরিত ধারণা থেকে বলেছে, ‘বন্ধুর মা তো কিছুই করেন না!’ পরে অবশ্য তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, দিনভর সংসারে ব্যস্ত থাকাটাই মায়ের সব থেকে বড় কাজ। তিনি অতি যত্নে ওই কাজ করেন বলেই পরিবারের বাকি সদস্যরা নিশ্চিন্তে নিজের নিজের কাজ করতে পারেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলির মধ্যে এমন উদ্যোগ এই প্রথম বলে জানালেন মেদিনীপুর কলেজের মহিলা সেলের কো-অর্ডিনেটর মাধবী মাইতি। তাঁর কথায়, “লিঙ্গ বৈষম্যের সংস্কৃতি আবহমান কাল ধরে সমাজের প্রতিটি স্তরে এমন ভাবে গেঁথে আছে, যে ঘরের কর্ত্রী মায়ের কাজটাকেও কাজ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।”
কর্মশালার শুরুতে মেদিনীপুরে কলেজের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরাকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘নারী স্বাধীনতার কথা বলা হলেও এখনও সিংহভাগ চাকরিজীবী মহিলাকে বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ সামলাতে হয়। তাঁর জন্য চায়ের কাপ নিয়ে পরিবারের পুরুষ সদস্যটি অপেক্ষা করছেন, এমন দৃশ্য এখনও বিরল। পুরুষ মানেই শক্তিমান, আর নারী শক্তিহীন এই ভাবনার অবসানে এমন কর্মশালার খুব জরুরি। আমরা সারা বছর ধরে মোট চারটি পর্যায়ে এমন কর্মশালা চালিয়ে যাব।’’
কলেজের সেমিনার হলে এই কর্মশালায় যোগ দিয়েছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ৬৪ জন ছাত্রছাত্রী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার শর্মিষ্ঠা দত্তগুপ্ত জানালেন, সমাজে গেঁথে থাকা অসাম্যের শিকড় উপড়ে ফেলতে গ্রুপ ডিসকাসনে বেশি জোর দেওয়া হয়। এতে সচেতনতার কাজটা সহজে হয়।
কর্মশালায় হাজির মোহিত সনগিরি, অর্পিতা চৌধুরী, সৌম্যদীপ্ত জানা, ফিরোজা খাতুনদের মতো ৩৬ জন ছাত্রী ও ২৮ জন ছাত্র দিনের শেষে সত্যিই আলোকিত। ব্যতিক্রমী ছবিও ভেসে উঠল সেই আলোয়। এক পড়ুয়া জানাল, তার বন্ধুর বাবা অফিস থেকে ফিরে মায়ের জন্য জলখাবার বানান। আর রবিবার সংসার সামলনো মায়েরও ছুটির দিন।
কলেজ কর্তৃপক্ষের আশা, নতুন প্রজন্মের এমন ভাবনাই একদিন অসাম্যের অচলায়তন ভাঙতে পারবে।