শনিবারে নন্দকুমারের খঞ্চিতে সংবর্ধনাসভায় তাঁর জন্য কেউ এনেছিলেন মাছ, কেউ বা ফুলের স্তবক। সঙ্গে ছিল পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা। এক ধাপ এগিয়ে পরদিন, রবিবার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সরাসরি নামলেন রাস্তায়। আরও জোরদার হল পাশে থাকার বার্তা। তমলুকের সদ্য জয়ী তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বুঝলেন, জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রাম-সহ গোটা এলাকা তাঁর পাশেই রয়েছে।
তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে অপসারণের প্রতিবাদ জানাতে তৃণমূল নেত্রীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব। শনিবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা হবে। তার আগেই শুভেন্দুবাবুকে অপসারণের প্রতিবাদে প্রকাশ্যে পথে নামলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। রবিবার সকালে নন্দীগ্রামের কেন্দেমারি এলাকার ওসমানচক গ্রামে সোনাচূড়া থেকে নন্দীগ্রাম বাজারগামী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক।
গত শুক্রবার কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে সদ্য নির্বাচিত সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের খঞ্চিতে সাংসদ হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর শুভেন্দুবাবু তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন সংবর্ধনাসভায়। ওই দিন শুভেন্দুবাবু আরও বলেন, “কেউ কেউ প্রচার করেছিলেন আমার নাকি জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। আমি নাকি গতবারের চেয়ে কম ভোটে জিতব। কিন্তু যারা সমালোচক তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে গতবারের ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ব্যবধান টপকে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আমাকে আপনারা জিতিয়েছেন।” এরপর লোকসভা নির্বাচনে দলের বিপুল জয়ের নেপথ্য কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “অনেকেই অনেক ভোটে জিতেছেন। আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু তাঁরা কি কায়দায় ভোট করেছেন, কি কায়দায় জিতেছেন আমরা জানি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁদের এলাকায় কত ভোটের ব্যবধান ছিল তা জানি।”
শুভেন্দুবাবুর এই ক্ষোভ প্রকাশের পরেই রবিবার নন্দীগ্রামে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখাতে পথে নামেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। এ দিন সকাল ৬ টা নাগাদ নন্দীগ্রামের ভুতার মোড়ের কাছে ওসমানচক গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য শেখ ভগলু, দলের বুথ সভাপতি ভ্রান্তিভূষণ মণ্ডল, বুথ কমিটির শেখ রহুল আমিনের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ জন দলীয় কর্মী-সমর্থক তৃণমূলের পতাকা নিয়ে ওই এলাকায় সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এর ফলে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া থেকে কলকাতার ফটকগামী দুটি বাস আটকে পড়ে ও নন্দীগ্রাম বাজার থেকে সোনাচূড়া রাস্তায় সমস্ত ট্রেকার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হয়রানির মুখে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ওই রাস্তা অবরোধের পরে সকাল ১০ টা নাগাদ তৃণমূল সমর্থকদের অবরোধ ওঠে। এ দিন অবরোধে নেতৃত্ব দেওয়া তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সেখ ভগলু বলেন, “নন্দীগ্রামে জমিরক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শুভেন্দুবাবুকে নন্দীগ্রামের মানুষ ভালবাসেন। শুভেন্দুবাবু সারা নন্দীগ্রামের মানুষের খুবই কাছের মানুষ। তাঁকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা আমরা মেনে নিতে পারছি না। শুভেন্দুবাবুকে ওই পদ থেকে সরানোর প্রতিবাদ জানাতেই আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। আমরা চাই শুভেন্দুবাবুকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদে ফের ফিরিয়ে আনা হোক।”
শুভেন্দুবাবুকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এ দিন প্রকাশ্যে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের রাস্তা অবরোধের ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের। তাঁর দাবি, “এ দিন সকালে ওসমানচক গ্রামে আমাদের দলের সমর্থকরা নন্দীগ্রাম-সোনাচূড়াগামী রাস্তা অবরোধ করেছিল বলে জানতে পেরেছি। তবে ওই এলাকার দলীয় সমর্থকরা আমাদের না জানিয়েই এই অবরোধ করেছে।” তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, “শুভেন্দুবাবুকে যুব সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্নস্থানে দলীয় কর্মী-সমর্থকরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ করছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আবেগ দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এ দিনের ঘটনা তারই প্রতিফলন।”