বয়স প্রায় আটষট্টি। দু’বেলা দু’মুঠো পেটের জোগাড় করতে এই বয়সেও লোকের বাড়ি বাসন মাজতে হয়। পুজো দেখার ফুরসৎ কই!
মনে পড়ে যায় ছোট্ট বেলার কথা। এক প্যান্ডেল থেকে আর এক প্যান্ডেলে দৌড়ে বেড়ানো। শুধু ছোট বেলা কেন, বিয়ের পরেও তো কয়েক বছর স্বামীর সঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরেছেন। পুজোর সময় এ রকম কত টুকরো টুকরো স্মৃতি ভেসে ওঠে! পারুল দাস, ভগবতী চৌবে, কামিনী টুডুদের শরীর আর চলে না!
এঁদের সকলকে পুজোর দেখানোর ব্যবস্থা করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এমনই গরিব বৃদ্ধবৃদ্ধা এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নবমীর দিন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরবে তারা। শুধু ঠাকুর দেখা নয়, টিফিন ও দুপুরের খাবারেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এই নিয়ে পাঁচ বছরে পা দিল ব্যবসায়ী সংগঠনের এই উদ্যোগ। যা পেয়ে বেজায় খুশি পারুল দাস, কামিনী টুডুরা। তাঁদের কথায়, “কী ভীষণ যে আনন্দ হচ্ছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে।” ব্যবসায়ী সংগঠনের মেদিনীপুর শহরের সম্পাদক চন্দন রায় বলেন, “আনন্দের সাক্ষী হতেই জন্যই আমাদের এই আয়োজন।”
প্রথম দিকে অবশ্য অল্প মানুষকে নিয়ে এই আয়োজন হত। চলতি বছরে সংখ্যাটা ১৬০ জনে ঠেকেছে। নবমীর দিন সকলকে নিয়েই সকাল থেকে বেরিয়ে পড়বেন ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা। শহরের প্রতিটি প্যান্ডেলে ঘুরিয়ে দেখাবেন।
পুজো মানেই তো আনন্দ। দেদার খাওয়া আর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা। কিন্তু, হতদরিদ্র পরিবারগুলির কাছে সে সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সে সবের গন্ধও পৌঁছয় না। কোথাও কোনও সংস্থা বা সংগঠন নতুন বস্ত্র দিচ্ছে জানতে পারলে ছুটে যান। যদি পুজোয় একটা নতুন কিছু মিলে যায়। নিজেদের তো আর কেনার সাধ্য নেই। হাতে সামান্য কিছু টাকা থাকলেও তা ছেলে বা নাতিপুতির কিছু কিনতেই শেষ। তাঁদের কাছে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো বিলাসিতা বই অন্য কিচ্ছু নয়। পুরনো স্মৃতি হাঁতড়ে খুঁজে ফেরেন কত দিন আগে পুজো দেখেছিলেন। সেই স্মৃতিকে আরও একবার বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে দিতেই এগিয়ে এসেছে এই ব্যবসায়ী সংগঠন।