এমসিসি সদস্যদের হেনস্থা, রিপোর্ট তলব জেলাশাসকের

কেশপুরে এমসিসি (মডেল কোড অফ কনডাক্ট) দলের কর্মীদের হেনস্থার ঘটনায় নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালেই মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তের কাছ থেকে এ নিয়ে রিপোর্ট তলব করেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৭
Share:

জেলাশাসকের দফতরে বাম নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র।

কেশপুরে এমসিসি (মডেল কোড অফ কনডাক্ট) দলের কর্মীদের হেনস্থার ঘটনায় নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালেই মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তের কাছ থেকে এ নিয়ে রিপোর্ট তলব করেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি। দুপুরেই জেলাশাসককে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন মহকুমাশাসক।

Advertisement

সোমবার মিছিল সেরে ফেরার পথে আক্রান্ত হন কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি সহ ১১ জন নেতা-কর্মী। অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয় এক বাম- প্রতিনিধি দল। এই পরিস্থিতিতে কেশপুরে সুষ্ঠু ভোট করা যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেন ওই দলের সদস্যরা। জেলাশাসক অবশ্য আশ্বস্ত করেন, সুষ্ঠু ভোট করতে সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পরে জেলাশাসক বলেন, “কেশপুরের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

এমসিসি দলের কর্মীদের হেনস্থার ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন কি রিপোর্ট তলব করেছে? তিনি বলেন, “রোজই আমাদের কমিশনে রিপোর্ট পাঠাতে হয়। আগের দিনই কেশপুরের ঘটনার খবর পেয়েছি। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মহকুমাশাসককেও বিষয়টি দেখতে বলেছি।” পুলিশ সূত্রে খবর, সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপর হামলা এবং এমসিসি দলের কর্মীদের হেনস্থা, দুই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগেই সোমবার রাতে শ্যামল শাসমল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যদিও মূল অভিযুক্তরা পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Advertisement

সোমবার সকালে কেশপুরের কেওটপাড়া থেকে শশাবনি পর্যন্ত ঘাটালের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণার সমর্থনে মিছিল সেরে ফেরার পথে সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপর তৃণমূলের লোকজনেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি-সহ ১১ জন নেতা-কর্মী জখম হন। একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। মিছিলের ছবি তুলতে গিয়েছিলেন এমসিসি দলের সদস্যরা। বাজুয়াড়ার কাছে সিপিএম নেতা-কর্মীদের যখন মারধর করা হচ্ছে, সেই ছবিও তোলার চেষ্টা করেন তাঁরা। তখনই তৃণমূলের লোকজনেরা তাঁদের বাধা দেয় ও হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করেন কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতার।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে জেলাশাসককে প্রাথমিক রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়ার পর বিডিওর কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন মহকুমাশাসক। চেয়েছেন ভিডিও-ফুটেজ। ওই দিন সিপিএম ৯২ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের নামে অভিযোগ জানিয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এক জনকেই গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? পুলিশের এক সূত্রের দাবি, অনেকের মুখেই কাপড় বাঁধা ছিল। ভিডিও- ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

মঙ্গলবার সকাল দশটা নাগাদ জেলাশাসকের কাছে আসে এক বাম- প্রতিনিধি দল। দলে ছিলেন সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা ঘাটালের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণা, কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দরানি ডল প্রমুখ। মিনিট পনেরো তাঁরা জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। নিজেদের বক্তব্য জানান। পরে সন্তোষবাবু বলেন, “কেশপুরে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আগেও ওঁকে (জেলাশাসককে) জানিয়েছি। আজও জানালাম। আমাদের বিধায়ক আক্রান্ত হলেন, নেতা- কর্মীরা আক্রান্ত হলেন, অথচ পুলিশের কোনও হেলদোলই নেই। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার বদলে তাদের কী ভাবে রক্ষা করা যায়, সেই চেষ্টাই করছে। তৃণমূলের যে লোকটার কাছ থেকে আক্রান্ত বিধায়কের খোওয়া যাওয়া ব্যাগ উদ্ধার হল, তাকেও তো গ্রেফতার করতে পারত। কিন্তু, করল না।” তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবেই আমরা জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। উনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বাইরে থেকে লোক এনে সিপিএম কেশপুরকে অশান্ত করতে চাইছে। এ প্রসঙ্গে সন্তোষবাবু বলেন, “আমরা বাইরে থেকে লোক এনে কেশপুরে কর্মসূচি করব? এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না!” কেশপুরের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে বামফ্রন্ট। কোথাও অবশ্য বড় মিছিল হয়নি। পাড়া এবং অঞ্চলস্তরে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন