কারখানা চালুর দাবিতে মিছিল বাকিবাঁধ গ্রামে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ধর্না-অবস্থানে সাত দিন কাটল। কিন্তু, যেখানে ছিল সেখানেই রইল তৃণমূল!
শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা চালুর দাবিতে লাগাতার অ-রাজনৈতিক ধর্না-অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছেন জমিদাতা পরিবারের সদস্যেরা। একই দাবিতে ঢিল ছোড়া দূরে তৃণমূল দলীয় পতাকা নিয়ে ধর্না-অবস্থান শুরু করছেন। কিন্তু লক্ষ্যণীয় হল, পাশাপাশি সাত দিন অবস্থান চালিয়ে, শাসক দলের দুই বড় নেতাকে হাজির করিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব এতটুকু লক্ষ্যভ্রষ্ট করে নিজেদের অবস্থান মঞ্চে জমিদাতাদের কাউকেই সামিল করতে পারলেন না। ‘শালবনি জেএসডব্লিউ বেঙ্গল স্টিল লিমিটেড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর ঐক্য এখনও অটুট!
জমিদাতাদের মতে, শাসক দল লাগাতার আন্দোলন জারি রেখে, মাঝে মধ্যে রাজ্য নেতা ও মন্ত্রীদের পাঠিয়ে এলাকার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাবেন যে, কারখানা খোলার দাবিতে শাসক দল তাঁদের পাশেই রয়েছে। কিন্তু তাতে কী আদৌ কাজ হবে? জমিদাতা সংগঠনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতোর সাফ কথা, সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের স্বার্থ দেখবে। তাই তাদের সঙ্গে না গিয়ে তাঁরা নিজেদের মতো করেই লড়বেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা কারখানা চালু করার দাবিতে প্রকল্প সংলগ্ন বাকি বাঁধ গ্রামে মিছিল করেন। সম্পাদকের কথায়, “প্রয়োজনে মিছিল নিয়ে জাতীয় সড়কে হাটব। কোনও অবস্থায় কোনও প্রলোভনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতায় যাচ্ছি না।” নেতার সঙ্গে সহমত সংগঠনের সভাপতি অসিত মাহাতো, মনোবিলাস মাহাতো, আদিত্য মাহাতোরা।
এ দিন সংগঠন সম্পাদক বলেন, “জমিদাতার পরিচয়পত্র, শেয়ারের নথি নিশ্চয়ই রাজ্য সরকারের কাছে রয়েছে। তা আমাদের দেওয়া হোক। তারই সঙ্গে সরকার জানাক, কারখানা খোলার দাবিতে শাসক দলের আন্দোলন ছাড়া আর কী ইতিবাচক পদক্ষেপ করছে।” তাঁর কথায়, দলের রাজ্য সভাপতি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি। তাঁকে দাবিসনদ সংক্রান্ত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তাই একটু দিতে চান। কিন্তু, শুধু আন্দোলন করে ২০১৬-র নির্বাচন কাটাতে চাইলে তাঁরা তা মেনে নেবেন না, এ দিন তা ফের স্পষ্ট করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, আন্দোলনরত জমিদাতাদের ‘মন’ সত্যিই তাঁরা পাননি। সেই মন পাওয়ার চেষ্টা জারি রাখতে ও কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দল যাতে সেই আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করতে না পারে, সে আশঙ্কা ঠেকাতে দল লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শাসক দলের ধর্না না ওঠায় বিজেপি কারখানার গেটে ধর্নার কথা ঘোষণা করার পরেও পুলিশের অনুমতি পায়নি। ডিওয়াইএফও কারখানার গেটে এক দিন মিছিল করার পর বসে গিয়েছিল। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি কারখানার গেট থেকে ফিরে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবারই অবশ্য জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফ।
ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউয়ের দাবি, “২০১১ সালে ক্ষমতায় বসার পর রাজ্য সরকার জিন্দলদের কারখানা খোলার জন্য কী কী পদক্ষেপ করেছে সে বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।” তাঁর অভিযোগ, তা না করে তৃণমূল লোক দেখানো আন্দোলনে নেমেছে।