কুরবানির ঈদের আনন্দে মাতল আট থেকে আশি

দুর্গাপুজোর রেশ এখনও কাটেনি। তার মাঝেই চারিদিকে আবার সাজ সাজ রব। ঈদ ঘিরে আবারও মেতে উঠল গ্রাম থেকে শহর। সোমবার সকাল থেকেই উত্‌সবের আমেজে মেতে ওঠে সবাই। সকালবেলা প্রথমেই মসজিদে বা ইদগাতে গিয়ে নমাজ পড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১২
Share:

দুর্গাপুজোর রেশ এখনও কাটেনি। তার মাঝেই চারিদিকে আবার সাজ সাজ রব। ঈদ ঘিরে আবারও মেতে উঠল গ্রাম থেকে শহর। সোমবার সকাল থেকেই উত্‌সবের আমেজে মেতে ওঠে সবাই। সকালবেলা প্রথমেই মসজিদে বা ইদগাতে গিয়ে নমাজ পড়া। তারপর নতুন পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো। সঙ্গে রয়েছে পায়েস, সিমাই, লাচ্ছা- কত রকমারি খাবারের আয়োজন। চকে, রাস্তার মোড়ে মাইকের আওয়াজেও মাতোয়ারা হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নানা প্রান্ত।

Advertisement

ঈদুজ্জোহা। যা বকরি ঈদ বলেই বেশি পরিচিত। এর নেপথ্যে রয়েছে এক ধর্মীয় ভাবাবেগ। মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, আল্লাহ বা ঈশ্বরের নির্দেশেই এই উত্‌সব পালিত হয়ে আসছে। ঈশ্বরের নির্দেশ আসে তাঁর প্রিয় শিষ্য ইব্রাহিমের কাছে। ইব্রাহিমকে তাঁর প্রিয় জিনিস কুরবানি দিতে হবে। কিন্তু কি সেই প্রিয় জিনিস? পোষা গরু, ছাগল? না, কোনটাই সব থেকে প্রিয় হচ্ছে না। কারণ, একমাত্র প্রিয় তো নিজের সন্তান। তাই সন্তান ইসমাইলকে তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশে বলি দিতে চান। কিন্তু কিভাবে নিজের চোখের সামনে প্রিয় সন্তানকে বলি দেবেন? বুক কেঁপে ওঠারই কথা। তাই চোখ বেঁধে তিনি সন্তানকে বলি দিতে যান। বলি শেষে দেখেন, তাঁর প্রিয় পুত্র পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলি হয়ে পড়ে রয়েছে দুম্বা। অর্থাত্‌ নরহত্যা নয়, এ উত্‌সবের মূল বলি হল চারপেয়ে পশু। সেই থেকেই গরু, ছাগল, উটের মতো চারপেয়ে বলি দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়।

সোমবার মেদিনীপুর, খড়্গপুর, কেশপুর, গড়বেতা-সহ সমস্ত এলাকার মুসলমি সম্প্রদায় তাই নমাজ সেরে কুরবানি দেন তাঁদের প্রিয় পশু। তবে সকলকেই কুরবানি দিতে হবে এমন নয়। যাঁর সামর্থ্য রয়েছে, তিনিই দেবেন কুরবানি। তাহলে যাঁরা কুরবানি দেবেন না, তাঁরা কী আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তা কখনই নয়। এই কারণেই কুরবানি-র তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মালিক। বাকি দু’ভাগের এক ভাগ বিতরণ করা হবে গরিব মানুষের মধ্যে, আর একটি ভাগ আত্মীয়স্বজনকে দিতে হবে। ফলে মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজার থেকে দেওয়ানবাবার চক, বড় আস্তানার চক বা মোমিন মহল্লা, খড়্গপুরের ইন্দা হোক বা বড়বাত্তি, ছোট আইমা হোক বা পুরাতন বাজার- উত্‌সবের আনন্দে মেতে উঠেছেন আবালৃদ্ধবণিতা। আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠছে মহল্লাগুলি।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই ঈদুজ্জোহায় মেতে উঠেছিল রেলশহর খড়্গপুরের মুসলিম পরিবারগুলি। ঈদগাহ ময়দান, গোলবাজার মসজিদ, পীরবাবা-সহ বিভিন্ন মসজিদে নমাজ পড়েন অনেকে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহরমের মতোই শোভাযাত্রাও বেরোয়। জমিদারমহল্লার ‘ফ্রেন্ডস ক্লাব’, ঈদগামহল্লার ‘সান ক্লাব’, ফকিরমহল্লার ‘চাঁদ ক্লাব’, ভবানীপুরের ‘হোয়াইট হাউস’-এর মতো আখড়া কমিটিগুলির শোভাযাত্রা শহর পরিক্রমা করে। ঈদগামহল্লার ‘সান’ আখড়া কমিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় কাউন্সিলর তৈমুর আলি খান বলেন, “দশেরাতেও এলাকার একটি আখড়ার সঙ্গে ছিলাম, ঈদেও আখড়ার সঙ্গে আছি। এটাই আমাদের শহরের সম্প্রীতির ছবি।”

শুধু শহর কেন, কেশপুর, গড়বেতার মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও একইভাবে আনন্দে মেতে উঠেছেন সকলে। বাড়িতে নানা ধরনের খাবারের আয়োজন তো রয়েছেই, তার সঙ্গে যাঁরা কিছুটা অর্থশালী তাঁরা পরেছেন নতুন পোশাক।

উত্‌সবকে ঘিরে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য কড়া পুলিশি প্রহরাও রয়েছে। বিশেষত, বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার পর নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে তত্‌পর পুলিশ। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশ পিকেট রয়েছে। একদিকে এখনও প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে রয়েছে দুর্গা, অন্য দিকে চলছে ঈদের কুরবানি। সোমবার রাত আট’টার পর ফের প্রতিমার বিসর্জন হবে।

সারাদিন অবশ্য শান্তিতেই কেটেছে আনন্দের এই উত্‌সব। উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একে অন্যের বাড়িতে গিয়েছেন। হয়েছে ভুরি ভোজও। তবে তারস্বরে মাইকের আওয়াজে ব্যতিব্যস্ত হয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। সরস্বতী পুজো হোক বা ঈদ। এক্ষেত্রেও মাইক বাজানোর কোনও ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই এ বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে শব্দ বিধি মেনে মাইক বাজানোর জন্য পুরষ্কারের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন