কর্মিসভায় সন্ধ্যা গাইলেন, বোম বোম তারক বোম

তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন আগেই। এ বার কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করলেন মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। শুক্রবার নারায়ণগড় ব্লকের বেলদার মহম্মদপুরে কর্মিসভায় যোগ দেওয়ার আগে স্থানীয় জয় মা কালী মন্দিরে পুজো দেন ‘বাবা তারকনাথে’র ‘সুধা’। পরে কর্মিসভায় বলেন, “এই ভূমি পুণ্যভূমি। মেদিনীপুরের উপর দিয়েই চৈতন্য মহাপ্রভু পুরী ভ্রমণে গিয়েছিলেন। এই পুণ্যভূমিতে আমার প্রথম প্রচার।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচি

নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৬
Share:

বেলদার কর্মিসভায় মঞ্চে উঠে পড়লেন অভিনেত্রীর এক ভক্ত। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন আগেই। এ বার কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করলেন মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। শুক্রবার নারায়ণগড় ব্লকের বেলদার মহম্মদপুরে কর্মিসভায় যোগ দেওয়ার আগে স্থানীয় জয় মা কালী মন্দিরে পুজো দেন ‘বাবা তারকনাথে’র ‘সুধা’। পরে কর্মিসভায় বলেন, “এই ভূমি পুণ্যভূমি। মেদিনীপুরের উপর দিয়েই চৈতন্য মহাপ্রভু পুরী ভ্রমণে গিয়েছিলেন। এই পুণ্যভূমিতে আমার প্রথম প্রচার। আমি পুজো দিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। আমাকে আশীর্বাদ করুন, মমতা বদ্যোপাধ্যায়কে জয়যুক্ত করুন।” আরমঞ্চ ছাড়ার আগে তিনি গেয়ে ওঠে বাবা তারকনাথ ছবির সেই জনপ্রিয় গানের কলি— ‘বোম বোম তারক বোম, ভোলে বোম তারক বোম...।’

Advertisement

নারায়ণগড় বরাবর বামেদের ‘শক্ত ঘাঁটি’। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ভরা জোয়ারেও এখান থেকে জিতেছিলেন সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। সে দিক থেকে দেখলে সূর্যবাবুর খাসতালুক থেকেই এ দিন প্রচার শুরু করলেন সন্ধ্যাদেবী। পরোক্ষে সেই সূত্রে টেনে সন্ধ্যাদেবীকে বলতেও শোনা যায়, “এখন নতুন সূর্য উঠেছে। আলো পড়েছে সকলের সামনে। পথ দেখতে পাচ্ছে মানুষ।” বামেদের সমালোচনা প্রসঙ্গে সন্ধ্যাদেবী টেনে আনেন রবীন্দ্রনাথের লাইন। বলে ওঠেন, “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো/তুমি কি তাঁদের ক্ষমা করিয়াছো, তুমি কি বেসেছো ভাল!’

তারকা প্রার্থীর কর্মিসভা, তাই সকাল থেকেই মহম্মদপুরে ভিড় জমিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। ‘বাঘিনী’র নায়িকাকে দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু মহিলা ভক্তও এসেছিলেন। ভিড়ে থাকা পোক্তাপোলের বাসিন্দা বছর সত্তরের বৃদ্ধা আরতি মাইতি তো সটান উঠে যান মঞ্চে। অভিনেত্রীকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরছিলেন। মঞ্চ থেকে নেমে সন্ধ্যাদেবী বলেন, “অল্পবয়সে সন্ধ্যা রায়ের সিনেমা দেখতাম। এখন চলতে পারি না। তবু ওঁর টানেই এসেছি। ওঁকে আশীর্বাদ করলাম। যে ভাবেই হোক এ বার ভোট দিতে যেতেই হবে।” ভক্তদের এমন ভালবাসায় আপ্লুত সন্ধ্যাদেবীও মঞ্চ থেকে বললেন, “শিল্পী মন আমার কাঁদে! এই তো একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘মা আমি তোমাকে ভোট দেব, তুমি জিতবে।’ বিশ্বাস করি আপনারাও ভোট দেবেন। আমার জন্য নয়, নেত্রী মমতা বদ্যোপাধ্যায়ের জন্য, যিনি উন্নয়নের আলো জ্বেলেছে।”

Advertisement

এ দিনের সভায় সন্ধ্যাদেবী ছাড়াও ছিলেন, দলের জেলা চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, ব্লক তৃণমূল সভাপতি মিহির চন্দ। কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে উঠে শুরুতেই তিনি বলেন, “৫০ বছর ধরে আমি পরীক্ষা দিয়েছি। সাড়ে চারশো ছবি করে আমি আপনাদের মন জয় করেছি। আজকে এই নতুন ভূমিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।” কোনও কিছু পাওয়ার আশায় নয়, মানুষের জন্য কাজ করতেই তিনি যে রাজনীতিতে এসেছেন, সেই বার্তাও এ দিন দিয়েছেন অভিনেত্রী। তাঁর কথায়, “আমি অনেক দুঃখ-দারিদ্র জয় করে এই জায়গায় এসেছি। দু’টো খাওয়ার মতো অবস্থা আমার আছে। মানুষের কথা যখন খবরের কাগজে পড়ি, আমার কান্না পেয়ে যায়। ভাবি কেন মানুষ না খেয়ে থাকবে?”মেয়েদের দুর্দশা নিয়েও এ দিন সরব হন তৃণমূল প্রার্থী। বলেন, “মেয়েরা ঘরে বসে নেই। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে। কিন্তু তাঁদের কেন কষ্ট হবে? একটা মেয়েও না খেয়ে থাকবে না, স্বামীর দ্বারা বিতাড়িত হবে না, সন্তানরা তাঁকে অন্ন থেকে বঞ্চিত করবে না। এটা আমার প্রার্থনা। আমরা সকলে মিলে কাজ করব।”

এ দিন খড়্গপুর-১ ব্লকের গোপালি পঞ্চায়েতের ঘাঘরাতেও একটি সভা করেন সন্ধ্যাদেবী। সেখানে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে খড়্গপুরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর নেতা জহরলাল পাল ও দেবাশিস চৌধুরীকেও। এখানেও মহিলা ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “আমি গ্রামে বড় হয়েছি। আমি জানি এই সব এলাকার কী সমস্যা। আমাকে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিন। আমি তাঁর সৈনিক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন