গুলিতে নিহত গোপীবল্লভপুরের ‘ত্রাস’ বিশু ভকত

অতর্কিত দুষ্কৃতী হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলেন গোপীবল্লভপুরের শাসড়া গ্রামের যুবক বিশ্বজিৎ ভকত (৩২)। এলাকার ত্রাস বিশ্বজিৎকে বিশু নামেই চিনতেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে বেআইনি ভাবে পণ্যবাহী লরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন বিশু ও তাঁর দলবল। পুলিশ-প্রশাসন আর শাসক দলের মদতেই এলাকায় রাজ করতেন বিশু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫২
Share:

নিহত বিশ্বজিৎ। নিজস্ব চিত্র।

অতর্কিত দুষ্কৃতী হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলেন গোপীবল্লভপুরের শাসড়া গ্রামের যুবক বিশ্বজিৎ ভকত (৩২)। এলাকার ত্রাস বিশ্বজিৎকে বিশু নামেই চিনতেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে বেআইনি ভাবে পণ্যবাহী লরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন বিশু ও তাঁর দলবল। পুলিশ-প্রশাসন আর শাসক দলের মদতেই এলাকায় রাজ করতেন বিশু।

Advertisement

এই বিশুই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপীবল্লভপুরের শাসড়া চকে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে গুরুতর জখম হন। ওড়িশার বারিপদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। হামলাকারীদের ভোজালির কোপে গুরুতর জখম হন বিশুর এক সঙ্গী। তিনিও বারিপদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় শাসড়ায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।

তৃণমূল ও এলাকাবাসীর একাংশের চোখে অবশ্য বিশু ‘সমাজসেবী’। একই সঙ্গে তৃণমূলের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক সভাপতি সিংরাই মুর্মুর দাবি, “ওই যুবক আমাদের দলের কেউ নন। শুনেছি, উনি গাড়ি পারাপার করতেন।” তবে সেই পারাপার আইনি না বেআইনি তা জানাতে পারেন নি সিংরাইবাবু। যদিও স্থানীয় সূত্রের দাবি, কুখ্যাত তোলাবাজ বিশু ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছরে নানা অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ উঠলেও বারে বারেই তাঁকে আড়াল করা হয়েছে। বিশুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নিত না পুলিশ। বিশু যে সমাজ বিরোধী তা জানেন না ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষও। তিনি বলেন, “নিহত যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ আছে বলে আমার জানা নেই। তদন্ত চলছে। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

স্থানীয় তৃণমূলের সঙ্গে বিশুর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এলাকায় সর্বজনবিদিত। একাধিক দামি চার চাকার গাড়িও ছিল বিশুর। গত মে মাসে লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূলের একাধিক নির্বাচনী মিছিলে দেখা গিয়েছিল বিশুকে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেও দেলা পরিষদের একটি আসনে বিশুর পছন্দের প্রার্থীকে টিকিট দিতে বাধ্য হয় শাসক দল। শুক্রবার শাসড়ায় গিয়ে দেখা গেল থমথমে এলাকায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র পুলিশ। শাসড়া চক থেকে কিছুটা দূরে তিন তলা বাড়ি রয়েছে অবিবাহিত বিশুর। বাবা মারা গিয়েছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে বিশু ছোট। বড়দা নন্দলাল চাষাবাদ করেন। মেজদা তাপস ছোটখাটো ব্যবসা করেন। চার বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

বৈঠকখানায় দামি সোফায় বসে ছোট ছেলের শোকে কাঁদছিলেন বৃদ্ধা রেণুবালাদেবী। তিনি বললেন, “ছোট ছেলেই ছিল পরিবারের আশা-ভরসা। ও চলে যাওয়ায় সব শেষ হয়ে গেল!” নন্দলালবাবু জানালেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজকার মতোই শাসড়া চকে গিয়েছিলেন বিশু। পিচ রাস্তার ধারে স্থানীয় ক্লাব লাগানো উঠোনে বিশু ও তাঁর সঙ্গীরা তাস খেলছিলেন। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হামলার ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী নগেন বেরা, আদিত্য দে-রা জানালেন, গোপীবল্লভপুরের দিক থেকে একটি সাদা গাড়ি এসে থামে ক্লাবের সামনে। বিশুর উপর চড়াও হয় মাফলারে মুখবাঁধা সশস্ত্র পাঁচ যুবক। তাদের ডান হাতে পিস্তল ও বাঁ হাতে ভোজালি ছিল। খুব কাছ থেকে বিশুকে গুলি করা হয়। বিশুর সঙ্গী মগলুকে ভোজালি দিয়ে কোপায় তারা। বিশুর শরীরে গুলি লাগে। লুটিয়ে পড়েন তিনি। বাকিরা পালিয়ে বাঁচে। ‘অপারেশন’ সেরে গাড়ি চেপেই ওড়িশার দিকে চম্পট দেয় হামলাকারীরা।

কারা মারল বিশুকে?

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার আর এক কুখ্যাত তোলাবাজ মানিক শ্যামলের গোষ্ঠীর সঙ্গে বিশুর দীর্ঘদিনের বিবাদ ছিল। সেই রেষারেষির জেরেই বিশুকে মরতে হল বলে এলাকাবাসীর ধারণা। ২০০৯ সালে দুই তোলাবাজ গোষ্ঠীর রেষারেষিতেও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বিশু। কটকের হাসপাতালে চিকিৎসার পরে তিনি সুস্থ হন। বাম আমলেই তাঁর উত্থান। পরিবর্তনের পরে বিশুর দাপট বাড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় জামশোলা চেকপোস্টের ঝক্কি এড়াতে যাতায়াতকারী পণ্যবাহী লরিগুলি বিশুদের টাকা দিয়ে ঘুরপথে জঙ্গল রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। বিশুর বিরুদ্ধে সরব হওয়ায় গত বছর পাঁচকাহানিয়া মোড়ের ৫টি দোকানে আগুনও লাগিয়ে দিয়েছিল তোলাবাজেরা। ভোজালির কোপে জখম হয়েছিল এক কিশোরী। প্রতিবাদে বছর খানেক আগে বিশু ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে পাঁচকাহানিয়া মোড়ে টানা ১৯ ঘন্টা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এর পর কিছুদিন বিশু গা ঢাকা দেন। ফের স্বমহিমায় ফিরে আসেন এলাকায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement