গজাশিমূলে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে প্রচারে মুকুল রায়ের সঙ্গে ছিলেন দেব ও হিরণও। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
ঝাড়গ্রামে তারকাদের এনেও সভা জমাতে পারল না তৃণমূল।
গনগনে বৈশাখের তপ্ত দুপুরে সবুজ রঙের হেলিকপ্টার যখন ঝাড়গ্রামের গজাশিমুল আমবাগান মাঠের মাটি ছুঁল তখন দেব ও হিরণকে দেখতে মেরেকেটে ছ’সাতশো লোকের ভিড়! অস্থায়ী ওই হেলিপ্যাডের ঠিক উল্টোদিকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক মুম্বই রোডের ধারে গজাশিমুল হাইস্কুল প্রাঙ্গণ মাঠে মঞ্চ বেঁধে ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী উমা সরেনের সমর্থনে ‘তারকা-সভা’র আয়োজন করেছিল তৃণমূল। দুপুর ১টা নাগাদ কপ্টার থেকে নেমে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, পশ্চিম মেদিনীপুর যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো এবং সুপারস্টার দেব ও হিরণ-রা কিন্তু সভামঞ্চের দিকে গেলেন না। তারকাদের দেখার জন্য স্কুল প্রাঙ্গণের মাঠে আরও হাজার খানেক লোকজন জড়ো হয়েছিলেন। হেলিকপ্টার নামার আওয়াজে তারাও পড়িমরি করে তারকাদের দেখতে আমবাগান মাঠের দিকে ছুটলেন। ততক্ষণে সাদা স্করপিও গাড়িতে উঠে দেব-হিরণকে নিয়ে মুকুলবাবুরা রওনা দিলেন ১৭ কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির উদ্দেশে। বিভ্রান্ত জনতা আবার ছুট লাগাল সভামঞ্চ প্রাঙ্গণে। কিন্তু কোথায় দেব-হিরণ? জেলা তৃণমূলের এক নেতা ফিসফিস করে বললেন, “আরে লোকই তো হয় নি। দেব-হিরণকে নিয়ে মুকুলবাবুরা তাই রেস্ট নিতে গিয়েছেন। লোক হলে আসবেন।”
দুঃসহ দাবদাহে অধৈর্য জনতাকে বাগে আনতে সভামঞ্চ প্রাঙ্গণে ধামসা-মাদল বাজিয়ে আদিবাসী নাচ হল। কিন্তু দেবদর্শনে উদগ্রীব জনতা তাতে বিশেষ আগ্রহ দেখা গেল না। অগত্যা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি সভাপতি নির্মল ঘোষের মতো জেলানেতারা জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ‘সুশাসনে’ কীভাবে শান্তি ও উন্নয়ন ফিরেছে, সবিস্তারে তা আলোচনা করলেন। কিন্তু জনতার মন নেই। একে একে জেলার নেতা-মন্ত্রীরা সভামঞ্চে আসছেন। আর জনতা উঠে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ওই বুঝি এল! ইতিমধ্যে জনতার ধৈর্যের দেড়ঘন্টা কেটে গিয়েছে। দুপুর ২টো চল্লিশ নাগাদ রাজবাড়িতে বিশ্রামপর্ব সেরে দেব ও হিরণকে নিয়ে মঞ্চে এলেন মুকুলবাবু। তারকাদের দেখতে স্কুল প্রাঙ্গণ মাঠে তখন হাজার তিনেক জনতার ভিড়!
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু জনতার উদ্দেশে বললেন, “আমি কোনও বক্তৃতা দেব না। কারণ বক্তৃতা শোনার মতো মেজাজ আপনাদের নেই। আপনারা এসেছেন দেবের সঙ্গে কথা বলার জন্য। দেব এসেছে ওর বোন উমার জন্য আপনদের সমর্থন চাইতে।” কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দেব বললেন, “কেমন আছেন, ভাল আছেন তো? আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এত গরমে আপনারা অনেক দূরদূরান্ত থেকে এখানে এসেছেন। আমার বোন উমা সরেনের জন্য এখানে এসেছি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ উমাকে ভোট দেবেন। গত ২ বছর ৯ মাসে মমতাদির সরকার ঝাড়গ্রামে অনেক কাজ করেছে। দু’টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে। বেকার যুবকদের চাকরি দিয়েছে। অনেক রাস্তা পাকা হয়েছে।” দেব বলেন, “আমরা আগে এখানে ভয়ে শো করতে আসতে পারতাম না। গত ২ বছর ৯ মাস ধরে আমরা আবার ঝাড়গ্রামে আসতে পারছি কেবলমাত্র মমতাদির জন্য।” জিতলে ফের আসার আশ্বাস দেন দেব। এরপর হিরণের সঙ্গে জনতার পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। হিরণ বলেন, “৩৪ বছরের অপশাসন মমতাদি ঘুচিয়েছেন। মমতাদি বাংলার উন্নয়নে ‘সোনার যুগ’ দিয়েছেন।” মাত্র নয় মিনিটের মাথায় সভাপর্ব শেষ করে দুই তারকাকে নিয়ে নয়াগ্রামের খড়িকামাথানির উদ্দেশে উড়ে যান মুকুলবাবু। খড়িকামাথানির স্থানীয় নেতাজি সাধারণ পাঠাগার ক্লাবের মাঠে আয়োজিত তারকা-সভায় অবশ্য দলীয় প্রার্থী উমা সরেন ছিলেন না। সেখানেও মুকুলবাবু উমাকে জেতানোর আবেদন রেখে জনতার সামনে দেবকে এগিয়ে দেন।
খড়িকামাথানিতেও মাত্র দশ মিনিটেই তারকা-সভা শেষ হয়ে যায়। খড়িকামাথানির সভায় অবশ্য ছ’সাত হাজার লোক হয়েছিল। জনতার ভিড় দেখে খুশি হন দেব।