ঘরছাড়াদের কথা উঠতেই বচসা কেশপুরের সর্বদলে

ঘরছাড়া সিপিএম নেতা-কর্মীদের ঘরে ফেরানোর দাবি ঘিরে তপ্ত হল কেশপুরের সর্বদল বৈঠক। রীতিমতো বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে সিপিএম এবং তৃণমূল। সিপিএম নেতা এন্তাজ আলির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তৃণমূল নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

কেশপুরে সর্বদল বৈঠক।

ঘরছাড়া সিপিএম নেতা-কর্মীদের ঘরে ফেরানোর দাবি ঘিরে তপ্ত হল কেশপুরের সর্বদল বৈঠক। রীতিমতো বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে সিপিএম এবং তৃণমূল। সিপিএম নেতা এন্তাজ আলির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তৃণমূল নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের। শেষমেশ পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বৈঠকে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সব দলের কাছেই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানানো হয়।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবার কেশপুরে সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন জেলার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক শম্পা হাজরা, ডিএসপি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) মনোরঞ্জন ঘোষ, কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতার, কেশপুরের ওসি দয়াময় মাঝি, আনন্দপুরের ওসি উত্তম দেবনাথ প্রমুখ। ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। যেমন তৃণমূলের চিত্ত গড়াই, মহিউদ্দিন আহমেদ। সিপিএমের রামেশ্বর দোলুই, এন্তাজ আলি। চিত্তবাবু দলের জেলা কোর কমিটির সদস্য। মহিউদ্দিন জেলা পরিষদ সদস্য। রামেশ্বরবাবু কেশপুরের বিধায়ক। এন্তাজ জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য।

জানা গিয়েছে, বৈঠকের শুরুটা শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়। ক্রমে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা দাবিদাওয়া জানাতে শুরু করলে বিরোধ বাধে। সিপিএমের তরফে মূলত তিনটি দাবি জানানো হয়। ১) ঘরছাড়া নেতা-কর্মীদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ২) বন্ধ হয়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। ৩) সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। এরপরই সপর চড়ান তৃণমূল নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, এখন কেশপুরের সন্ত্রাসের পরিবেশ নেই। কাউকে ঘরছাড়া করে রাখা হয়নি। যাঁরা বাইরে রয়েছেন, তাঁরা যে কোনও সময়ই কেশপুরে ফিরতে পারেন। এই সময়ই এন্তাজ আলির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মহিউদ্দিন আহমেদের।

Advertisement

এক সময় কেশপুর ছিল ‘লালদুর্গ’। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও এখান থেকে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। ক্রমে কেশপুরে মাটি হারায় সিপিএম। অনেক নেতা-কর্মী মামলায় জড়িয়ে পড়েন। সংগঠনে ধস নামে। কেশপুরে সিপিএমের ৭টি লোকাল কমিটির কার্যালয় রয়েছে। এখন সব বন্ধ। মাঝে আনন্দপুর লোকাল কমিটির কার্যালয় খোলা হয়েছিল। পরে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সর্বদল বৈঠক শেষে সিপিএমের এন্তাজ আলি বলেন, “ভোটের আগে কার্যালয়গুলো খোলা দরকার। না হলে দলের কাজকর্ম হবে কী ভাবে? এখনও আমাদের ছ’শো কর্মী ঘরছাড়া রয়েছেন। তাঁদের নামের তালিকাও জমা দিয়েছি। অবিলম্বে এঁদের ফেরানোর দাবি জানিয়েছি।’’ তৃণমূল নেতা চিত্ত গড়াইয়ের পাল্টা বক্তব্য, “বাম-আমলেই কেশপুরে সন্ত্রাসের বাতাবরণ ছিল। মানুষ মনের কথা বলতে পারতেন না। ভোট দেওয়া তো দূর। এখন সেই পরিস্থিতি নেই।”

তবে কেশপুরে তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। লোকসভা নির্বাচনের মুখেও এলাকায় অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে অবশ্য আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। শনিবার সর্বদল বৈঠকেও পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা ভোট নির্বিঘ্ন করার আবেদন জানান। সেই সঙ্গে তাঁদের আশ্বাস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবিগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব দল যাতে সমান সুযোগ পায়, তা-ও দেখা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন