চোর সন্দেহে দু’জনকে গাছে বেঁধে গণপিটুনি

মাস দু’য়েক আগে যে এলাকায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল, সেখানেই বাইক সারাতে এসে ধরা পড়ে জুটল স্থানীয় বাসিন্দাদের মারধর। গয়না পরিষ্কারের অজুহাতে সোনার গয়না হাতানোর অভিযোগে ওই দুই ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে মারধর করল জনতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৮
Share:

মাস দু’য়েক আগে যে এলাকায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল, সেখানেই বাইক সারাতে এসে ধরা পড়ে জুটল স্থানীয় বাসিন্দাদের মারধর। গয়না পরিষ্কারের অজুহাতে সোনার গয়না হাতানোর অভিযোগে ওই দুই ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে মারধর করল জনতা। বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের পদুমবসার গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ডমরুধারী সিংহ ও রাজু শর্মা যথাক্রমে বিহারের মথুরাপুর ও বারৌনির বাসিন্দা। ধৃতদের কাছ থেকে একটি মোটরবাইক ও কিছু রাসায়নিক তরল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ডমরুধারী ও রাজু আদতে বিহারের বাসিন্দা হলেও তাঁরা হুগলির আরামবাগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আরও এক শাগরেদ জুটিয়ে ওই যুবকরা প্রথমে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছে বাড়ির দরজা, জানালার কাচ পরিষ্কারের কথা বলতেন। কাজ করতে করতে গল্পচ্ছলে গৃহস্থদের জানাতেন, তাঁরা সোনা-রুপো পরিষ্কারের কাজও করে থাকেন। যদি কেউ সোনা পরিষ্কারের জন্য দিতেন, তাহলে সুযোগ বুঝে গৃহস্থকে ঠকিয়ে সেই সোনা নিয়ে পালিয়ে যেতেন তাঁরা।

মাস দু’য়েক আগে তমলুক শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসান এলাকার বাসিন্দা শেখ সাজ্জাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ডমরুধারী ও তাঁর এক সঙ্গী। একই প্রক্রিয়ায় তাঁরা প্রথমে সাজ্জাদকে দরজা, জানালার কাচ পরিষ্কারের কথা জানান। তারপর কথায় কথায় সাজ্জাদ জানতে পারেন, ওই ব্যক্তিরা নাকি সোনা-রুপো পরিষ্কারও করেন। কিন্তু প্রথমেই সোনা পরিষ্কারের ঝঁুকি নেননি সাজ্জাদ। রুপো পরিষ্কারের কাজ দেন তিনি। ডমরুধারীরা হাসিমুখে রুপোর গয়না পরিষ্কার করে সাজ্জাদের হাতে তুলে দেন। এতেই বিশ্বাস বাড়ে সাজ্জাদের। এরপর তিনি তাঁর বৌদির তিন ভরি সোনার হার আর আংটি পরিষ্কার করতে দেন। সাজ্জাদ বলেন, “আমার সামনেই হারটা ওরা ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করছিল। হঠাত্‌ একজন জল খেতে চাওয়ায় আমি ঘর থেকে জলের বোতল আনতে গিয়েছিলাম। ফিরে আসার পর আমার হাতে একটা কৌটো দিয়ে আধঘণ্টা পর খুলতে বলেছিল।” টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার আধ ঘণ্টা পর কৌটো খুলে সাজ্জাদ দেখেন, ভিতরে সোনার হার কোথায়? তার বদলে রয়েছে জল। আর ততক্ষণে ডমরুধারীরা পগার পার!

Advertisement

সেই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে ফের তমলুকের পদুমবসান এলাকায় এসেছিল ডমরুধারী ও তাঁর দুই সঙ্গী। তমলুক-পাঁশকুড়া সড়কের ধারে থাকা একটি গ্যারাজে গাড়ি সারাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময় ডমরুধারীকে দেখে চিনতে পারেন সাজ্জাদ। মুখে কোনও কথা না বলে চুপিচুপি পিছন থেকে গিয়ে ডমরুধারীকে জাপটে ধরেন সাজ্জাদ। আর শুরু করেন গলা ফাটানো চিত্‌কার। সেই চিত্‌কারে ছুটে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। পালানোর পথে স্থানীয়দের হাতেই ধরা পড়ে যান রাজুও। তবে তাঁদের সঙ্গে থাকা একজন পালিয়ে যায়। এরপরই সাজ্জাদের কাছ থেকে প্রতারণার ঘটনার কথা জানতে পেরে ধৃতদের গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে উত্তেজিত জনতা।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জখম ওই দু’জনকে তমলুক থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ধৃত ওই যুবকদের কাছ থেকে পাওয়া একটি ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। তাতে প্লাস্টিকের কৌটো-সহ বেশকিছু রাসায়ানিক জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, এইসব জিনিস ব্যবহার করেই গয়না পালিশের নামে প্রতারণা করতেন ওই যুবকরা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই চক্রে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না তার তদন্ত করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন