দিল মহম্মদ। —ফাইল চিত্র।
ছোট আঙারিয়া গণহত্যা মামলায় অভিযুক্ত দিল মহম্মদের শর্ত সাপেক্ষে জামিনের আবেদন মঞ্জুর হল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলার দ্বিতীয় দফায় শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চ শর্ত সাপেক্ষে জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
৩০ অক্টোবর জামিন পেলেও এখনই তিনি আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে এখনও একাধিক মামলা থাকায় তিনি সংশোধনাগারেই রয়েছেন। এই তথ্য জানিয়ে দিল মহম্মদের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “ছোট আঙারিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলায় জামিন পাওয়া বড় ঘটনা। আমরা সব নথি দিয়ে হাইকোর্টকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, এটা নিতান্তই মিথ্যে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ।” এ বার কী তবে সুপ্রিম কোর্টে যাবে সিবিআই? এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি সিবিআইয়ের আইনজীবী তাপস বসু।
শর্ত সাপেক্ষে জামিনের ওই ব্যাখ্যায় বিচারকেরা জানিয়েছেন, গ্রেফতার হওয়ার পর ৪ বছর ২ মাস জেলে রয়েছেন দিল মহম্মদ। এই মামলাতেই প্রথম দফার বিচারে ৮ জন অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হয়েছেন। দ্বিতীয় দফার শুনানিতেও চার জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়াও দিল মহম্মদ অসুস্থ। এ সব কারণ ছাড়াও কেস ডায়েরির কথা উল্লেখ করে বিচারক ১০ হাজার টাকা ও দু’জন ব্যক্তিকে (এক জন স্থানীয়) জামিনদার রেখে জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।
ঘটনাচক্রে বুধবারই মেদিনীপুর আদালতে ছোট আঙারিয়া গণহত্যা মামলার শুনানির দিন ছিল। এ দিন অবশ্য শুনানি হয়নি। ৮ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির নির্দেশ দেন মেদিনীপুরের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক আভা খান। কেন পিছোল? আদালত সূত্রে খবর, হাইকোর্ট এ ব্যাপারে কী নির্দেশ দেয়, তা দেখার পরেই আদালত ফের শুনানি শুরু করতে চায়। তাই দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিল মহম্মদের আইনজীবী বিশ্বনাথ ঘোষের কথায়, “আমরা কলকাতা হাইকোর্টে বক্তার মণ্ডলের বিরুদ্ধে ১৯৩ ধারা প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছি। উনি প্রথম দফার শুনানিতে এক ধরনের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, পরের ধাপে অন্য সাক্ষ্য দিচ্ছেন। মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এক জনের বিরুদ্ধে ওই ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেই মামলার শুনানি এখনও হয়নি।”
২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি গড়বেতার ছোট আঙারিয়া গ্রামে বক্তার মণ্ডলের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় সিপিএম নেতা তপন ঘোষ, সুকুর আলি-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল (যদিও পরে গোলাপ মল্লিক নামে এক অভিযুক্ত খুন হয়ে যান)। প্রথমে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করলেও ২০০১ সালের ৩০ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।
২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর এসডিজেএম আদালতে বিলায়েত্ মোল্লা, সিরাজুল মল্লিক, মুজিবর মণ্ডল, বাবলা সিংহ ওরফে সর্দার ও আসাজুল খান এই পাঁচ অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেন। ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর এগরায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তপন ঘোষ ও সুকুর আলি। মামলাটিকে দু’ভাগ করে ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নতুন করে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ২৮ মে আট অভিযুক্তকেই বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন বিচারক।
এ দিকে, ২০১১ সালের ১৫ মে গড়বেতার চাঁদাবিলা থেকে দিল মহম্মদকে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। ছোট আঙারিয়া মামলায় পলাতক দিল মহম্মদকে গ্রেফতারের পরেই ফের নড়েচড়ে বসে সিবিআই। নতুন করে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় শুনানি। বক্তার মণ্ডল-সহ চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণও শেষ। অন্য দিকে, বক্তার মণ্ডল প্রথম দফায় বিচার চলাকালীন ‘কিছুই দেখেননি, কিছুই জানেন না’ বলে আদালতকে জানিয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় তিনিই সব নিজের চোখে দেখেছেন বলে আদালতে জানিয়েছেন। সেই সময় তাঁকে ও তাঁর পরিবারের সকলকে সিপিএম নেতারা খুনের হুমকি দেওয়ার কারণেই প্রথম দফায় আদালতে ওই সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল বলেও জানান। এরপর তারই বিরুদ্ধে অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
শপথ নিয়ে এক জন দু’বার দু’রকম কথা বলেন কী করে? কেন তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৩ ধারা প্রয়োগ করা হবে না, সেই আবেদন জানিয়েছেন। হাইকোর্টে সেই শুনানি না হওয়ায় মেদিনীপুর আদালতেও শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় অভিযুক্ত দিল মহম্মদের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় খুশির হাওয়া অভিযুক্ত মহলে।