শালবনিতে প্রকল্প এলাকার সামনে একাংশ জমিদাতার বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
সব জমিদাতার চাকরি, পরিচয়পত্র-সহ বেশ কিছু দাবিতে মঙ্গলবার শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার সামনে বিক্ষোভ দেখাল একাংশ জমিদাতা পরিবার। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে নিজেদের দাবিদাওয়া জানান তাঁরা। প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (সিকিউরিটি) অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত দাবিপত্র দেন জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা। জমিদাতা পরিবারের পক্ষে পরিস্কার মাহাতোর বক্তব্য, “আমরা চাই, দ্রুত কারখানা চালু হোক। যাঁরা জমি দিয়েছেন, তাঁদের চাকরি দেওয়া হোক। সাত দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা না হলে ফের আমরা আন্দোলনে নামবো।” অমিতাভবাবু বলেন, “দাবিপত্র পেয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।”
এ দিন সব মিলিয়ে ১৩ দফা দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন একাংশ জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা। চাকরি না- হওয়া পর্যন্ত জমিদাতা পরিবারকে মাসিক ভাতা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরে শিল্প স্থাপনের জন্য জিন্দলদের এনেছিল রাজ্য সরকার। বেশ কয়েকটি এলাকার জমি দেখার পর শালবনির জমি জিন্দলদের পছন্দ হয়। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে শিলান্যাসও করা হয় প্রকল্পের। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও। শিলান্যাস অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে কলাইচণ্ডী খালের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ করে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ করে মাওবাদীরা। যদিও তাতে মন্ত্রীদের কিছুই হয়নি। কনভয়ের গাড়ি উড়ে গিয়ে পড়ে অনেক দুরে। তাতে আহত হয়েছিলেন কয়েকজন পুলিশ কর্মী। তারপর থেকেই কারখানার কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল।
পরে ফের দ্রুত গতিতে কাজ শুরুর জন্য উদ্যোগী হয় জিন্দলরা। বছর চারেক আগে ভূমি পুজো করে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গোড়ায় জিন্দল গোষ্ঠীর ঘোষণা ছিল, ২০১৩ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। তারপর বাজারের অবস্থা দেখে পরবর্তী পর্যায়ে কারখানার কতটা সম্প্রসারণ করা হবে, সেই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। শালবনির কাশীজোড়া, বাঁকিবাঁধ এলাকার প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠার কথা প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা। এটি এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা হবে বলে প্রথম থেকেই দাবি ছিল রাজ্য সরকার ও জিন্দল গোষ্ঠীর। ইতিমধ্যে জমির চারপাশে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। কারখানা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ইঞ্জিনিয়ার- অফিসার ও কর্মীদের বাসস্থান ও অফিসের পরিকাঠামো তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকার ৩০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই ৩০ একর জমিতেই বসবাস ও অফিসের পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। ঘোষণা মতো এরপরই শুরু হওয়ার কথা প্রাথমিক পর্যায়ে বছরে ৩ মিলিয়ন টন ইস্পাত তৈরির উপযোগী কারখানা ও ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির কাজ।
এক সময়ে প্রকল্প জমি- জটে আটকে ছিল। রাজ্যে পালাবদলের কয়েক মাস পর সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়তি জমির ছাড়পত্র মেলে। তবে প্রকল্পের কাজ এগোনোর ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। কাঁচামালের যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমন জলের সমস্যাও রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য প্রচুর জল প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে রূপনারায়ণ নদী থেকে জল আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য পাইপ লাইন বসাতে হবে। শালবনি, কেশপুর, ডেবরা, পাঁশকুড়া, কোলাঘাট প্রভৃতি এলাকার উপর দিয়ে এই লাইন যাওয়ার কথা। ফলে, সংশ্লিষ্ট এলাকার মাটি খুঁড়তে হবে। কোন কোন এলাকার উপর দিয়ে পাইপ লাইন যাবে, ইতিমধ্যে তার একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে জিন্দল গোষ্ঠী। এদিন একাংশ জমিদাতা পরিবারের সদস্য অমিতাভবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। আলোচনা চলার সময় জেনারেল ম্যানেজার (সিকিউরিটি) কিছু সমস্যার কথা জানান। জানান, কী কারণে কাজ এগোতে সমস্যা হচ্ছে। কারখানার সামনে বিক্ষোভ-কর্মসূচি ঘিরে এদিন অবশ্য অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা ঘটেনি। এদিন যাঁরা বিক্ষোভ-কর্মসূচিতে সামিল হন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সুভাষ মাহাতো, মদনমোহন মাণ্ডিরাও। সকলেরই এক বক্তব্য, জমি আর ফিরে পাবো না। কারখানার প্রয়োজনে সকলে জমি দিয়েছেন। এ বার চাকরি হলেই হল। বড় শিল্প হলে তো সকলেরই ভাল। আরও অনেকে কাজের সুযোগ পাবেন।