ট্রাকেই পচবে আলু, আশঙ্কা

ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে এখনও আটকে রয়েছে বহু আলু বোঝাই ট্রাক। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, মোহনপুর, বেলদা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো ট্রাক আটকে থাকায় প্রচুর পরিমাণ আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪২
Share:

মকরামপুর টোলপ্লাজার সামনে আটকে সার সার আলু বোঝাই ট্রাক।

ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে এখনও আটকে রয়েছে বহু আলু বোঝাই ট্রাক। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, মোহনপুর, বেলদা, নারায়ণগড়, খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো ট্রাক আটকে থাকায় প্রচুর পরিমাণ আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক বরেণ মণ্ডল বলেন, “তিন-চার দিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনশোরও বেশি আলু বোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। এ বার ওই আলু পচে যাবে।”

Advertisement

এ দিন থেকে অবশ্য প্রশাসনিক উদ্যোগে কিছু কিছু জায়গায় জাতীয় সড়কে আটকে থাকা লরিগুলি রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো শুরু হয়েছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বরুণচন্দ্র শেখর বলেন, “যে সব বাজারে আলুর ঘাটতি রয়েছে, সেই সব বাজারে আলু বোঝাই লরি পাঠানো হচ্ছে। আমাদের কাছে যেমন নির্দেশ আসছে, সেই মতোই পদক্ষেপ করছি।” বৃহস্পতিবার বেলদায় অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র মকরামপুর টোলপ্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেখানে তখন সার দিয়ে আলু বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে। মন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে লরিগুলো রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে পাঠানোর ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।

শুক্রবার বেলদায় অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে
মকরামপুরে নামলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।

Advertisement

আলু-জট কাটাতে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ প্রমুখ। নির্মলবাবু বলেন, “আলু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আওতায় এসেছে। রাজ্য সরকার সব দিক খতিয়ে দেখেই রাজ্যের আলু অন্য রাজ্যে পাঠানোর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। আলু ব্যবসায়ীদের উচিত, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া।” ব্যবসায়ীদের রাজ্যের বাজারে আলু বিক্রির পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

আলু ব্যবসায়ীরা অবশ্য তা মানতে নারাজ। শুক্রবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে আলোচনায় বসেছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী সোমবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি পালন করবেন আলু ব্যবসায়ীরা। বরেনবাবুর বক্তব্য, “আমরা রাজ্যবাসীকে সমস্যায় ফেলতে চাই না। কিন্তু রাজ্যের চাহিদা মিটিয়ে যে পরিমাণ আলু অতিরিক্ত হবে, তা রফতানি করতে দিতে হবে।” রাজ্য সরকার যাতে তাঁদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে, সেই দাবিও জানিয়েছেন আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের এই নেতা।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ওড়িশার জলেশ্বরে লক্ষ্মণনাথ চেকপোস্টে আটকে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গগামী ডিম-মাছ-পেঁয়াজ বোঝাই বেশ কিছু ট্রাক। প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে হাজার খানেক ট্রাক আটকে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এর মধ্যে কিছু ট্রাক ওড়িশার, কিছু অন্ধ্রপ্রদেশের। জলেশ্বরের বিজেডি বিধায়ক অশ্বিনীকুমার পাত্রের নেতৃত্বে স্থানীয়রাই ট্রাকগুলি আটকে রেখেছেন। তাঁদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলু ভর্তি ট্রাক ওড়িশায় ঢুকতে না দিলে, এই ট্রাকগুলি ছাড়া হবে না। অশ্বিনীবাবু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের চাহিদা মিটিয়ে আলু না পাঠালে তো মুশকিল। এটুকু সম্পর্ক তো বজায় রাখতে হবে।”

দ্রুত সমস্যার সমাধানের দাবিতে সরব হয়েছে বিজেপিও। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওড়িশাগামী জাতীয় সড়কেসার সার আলু বোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। এত আলু তো নষ্ট হয়ে যাবে। যদি অন্য রাজ্য এ রাজ্যে মাছ-ডিম পাঠাতে না দেয়, তখন কী হবে?” জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের অবশ্য দাবি, “রাজ্য সরকার সব দিক খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলু ব্যবসায়ীদের উচিত, রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করা।”

লরি আটকে থাকার ফলে আলু নষ্ট হয়ে গেলে সমস্যা আরও জটিল হবে বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার আলুর উৎপাদন অনেকটাই কম হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় গড়ে ২১.৭ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হয়। অথচ ২০১৩-’১৪ সালে মাত্র ১০.৫১ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। ধসা রোগের প্রকোপেই উৎপাদনে ঘাটতি। বাজারে এখনই আলু বিকোচ্ছে কিলো প্রতি ২০-২২ টাকায়। জোগান কম থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে।

আলু ব্যবসায়ীদের অবশ্য দাবি, রাজ্যে যে পরিমাণ আলু রয়েছে, তাতে সমস্যা হবে না। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরেণবাবুর বক্তব্য, “গত বছর জেলার ৭২টি হিমঘরে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ আলুর প্যাকেট ছিল। এ বার হিমঘরে ছিল ২ কোটি ৪০ লক্ষ প্যাকেট আলু। ফলে, জোগান কম হওয়ার কথা নয়।”

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন