তৃণমূল-মাওবাদী যোগ বোঝাতে প্রচারে বিজেপি

জঙ্গলমহলের সভায় বিজেপির সমাবেশে সশস্ত্র লোকজন ভিড় করায় ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। দলের সভা ও মিছিলে ‘মুখঢাকা বহিরাগত’দের আনাগোনা শুরু হয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। এই সূত্রেই উঠেছে বিজেপির সঙ্গে মাওবাদী সংস্রবের অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৯
Share:

জঙ্গলমহলের সভায় বিজেপির সমাবেশে সশস্ত্র লোকজন ভিড় করায় ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। দলের সভা ও মিছিলে ‘মুখঢাকা বহিরাগত’দের আনাগোনা শুরু হয়েছে বলেও পুলিশের দাবি। এই সূত্রেই উঠেছে বিজেপির সঙ্গে মাওবাদী সংস্রবের অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে কড়া প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য বিজেপি। সেই সঙ্গে ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের আগে মাওবাদী-জনগণের কমিটির ‘বন্ধু’ কারা ছিল, তথ্য দিয়ে তা-ও গ্রামে গ্রামে প্রচার করবেন বিজেপি কর্মীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার কলকাতায় দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে জঙ্গলমহলে কেউ কেউ অশান্তি করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জঙ্গলমহলে আগুন জ্বালতে দেব না। কেউ কেউ চাইছে আবার অশান্তি হোক। সে সব করতে দেওয়া হবে না।”

২০১১ সালের আগে তত্‌কালীন বিরোধী তৃণমূলের বিরুদ্ধে মাওবাদী সংস্রবের অভিযোগে সরব হয়েছিল তদানীন্তন শাসক বামেরা। তিন বছর পরে বর্তমানে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের সেই একই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তবে এ বার সরব বিরোধী বিজেপি। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বৃহস্পতিবার বলেন, “দেশ জুড়ে আমরা মাওবাদীদের বিরোধিতা করে আসছি। অথচ জঙ্গলমহলে বিজেপি-র রাজনৈতিক উত্থান ঠেকাতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মাওবাদী সংস্রবের অভিযোগ করছে তৃণমূল।” এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূল ও তাদের সঙ্গীরা কী ভাবে মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, তা বিজেপি কর্মীরা মানুষের কাছে গিয়ে সবিস্তার বলবেন বলেও জানান রাহুলবাবু। তাঁর কথায়, “বেলপাহাড়ির সভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করায় শিলাদিত্য চৌধুরীকেও তো মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদী তকমা দিয়েছিলেন। ফলে, তৃণমূলের চোখে এখন কারা মাওবাদী সেটাও স্পষ্ট।”

Advertisement

তৃণমূলের একাংশও মানছেন, জঙ্গলমহলে বিরোধী শক্তি হিসেবে উত্থান হচ্ছে বিজেপি-র। ‘সবুজ’ জঙ্গলমহলে ‘গৈরিক-আগ্রাসন’ ঠেকাতে তাই শাসক শিবিরে তত্‌পরতাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল অভিযোগ করছে, জঙ্গলমহলে রাজনৈতিক জমি দখলের জন্য মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপি অস্থিরতা তৈরি করতে চাইছে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “জঙ্গলমহলে বিজেপি-র কোনও সংগঠনই নেই। ওরা মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অশান্তি পাকাতে চাইছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিড়াল তপস্বী সাজছে।”

বিপুল সমর্থন নিয়ে মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলেও বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। সিপিএম ও আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডী দলগুলির অনেক নেতা-কর্মী বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। এমনকী তৃণমূলেরও কিছু নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই অবস্থায় মাওবাদী সংস্রবের অভিযোগ বিজেপির উত্থানে ধাক্কা দিতে পারে। জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যথেষ্ট ভয়ভীতি রয়েছে। শান্তির জঙ্গলমহলে অশান্তি দানা বাঁধলে তা রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি-র পক্ষে ভাল হবে না বলে মনে করছেন দলের একাংশ। ফলে, বিজেপি যে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এই বার্তাটি আরও জোরালো ভাবে প্রচার করার পাশাপাশি, তৃণমূল যে মাওবাদীদের লোকজনকে দলে নিয়ে জঙ্গলমহলকে আপাত শান্ত রেখেছে সেই বিষয়টিও প্রচার করা হবে।

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শুভাশিস পাল বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগে মাওবাদী-কমিটির সঙ্গে তৃণমূলের কী রকম সখ্য ছিল তার বহু তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। ওই সময় মাওবাদী-কমিটির ‘সন্ত্রাস বিরোধী’ সভা-মিছিলে বহুবার তৃণমূলের নেতারা যোগ দিয়েছিলেন। আবার তৃণমূলের সভামঞ্চে কমিটির নেতারাও থাকতেন। লালগড়ের খাসজঙ্গলে কমিটি-নেতা ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, জঙ্গলমহলে কারা মাওবাদীদের পৃষ্ঠপোষক ছিল তা জনগণকে জানানো জরুরি।”

তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মলবাবুর অবশ্য দাবি, “২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে সিপিএম ও পুলিশি নিগ্রহের শিকার আদিবাসী-মূলবাসীদের পাশে আমাদের দাঁড়ানোর বিষয়টিকে নিয়ে অপব্যাখ্যা করছে বিজেপি। জঙ্গলমহলের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে জবাব দেবেন।”

নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি জাহির করতে পুলিশের অনুমতি ছাড়াই গত ২২ অগস্ট বেলিয়াবেড়ার বাহারুনায় কয়েক হাজার লোকজনের জমায়েত করে সভা-মিছিল করেছিল বিজেপি। ওই দিন মিছিলের অভিযোগে তিন রাজ্য নেতা-সহ ৩৭ জন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ‘সুয়োমোটো’ মামলা রুজু করে পুলিশ। তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, লুঠপাঠ, ভাঙচুর, অস্ত্র আইন প্রভৃতি ধারায় আরও একাধিক মামলা রুজু হয়। ওই সব মামলায় ধরা হয়েছে দলের ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত মাহাতো-সহ ১৮ জনকে। আর এক অভিযুক্ত বিজেপির অন্যতম ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষ গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন