বেলপাহাড়ির জবলা গ্রামে এক বৃদ্ধা-সহ ৩ শবরের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনিক মহলে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামেই। এক জনের মৃত্যু হয় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে। সোমবার বিষয়টি জানতে পেরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ-কে অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। এ দিন বেলপাহাড়ি ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের একটি মেডিক্যাল টিম ওই গ্রামে গিয়ে শবর বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
লোকসভা ভোটের আগে এমন অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল। বিষয়টিকে নিয়ে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে সিপিএম। বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদার অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় ওই ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিধায়ক দিবাকরবাবুর দাবি, “রাজ্যে বাম জমানায় শবররা অসুস্থ হলে প্রশাসনের খরচে ভাড়ার গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্সে করে অসুস্থদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। শবরদের ক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া করে অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের তরফে গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে দেওয়া হতো। এখন শবরেরা ওই সুবিধা পাচ্ছেন না। সে জন্যই তাঁরা দূরবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে যেতে চান না।”
বিধায়কের অভিযোগ, গত ৫ মার্চ জবলা গ্রামের পানমণি শবর নামে এক অসুস্থ বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি পরিজনেরা। বিনা চিকিৎসায় ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। সময় মতো চিকিৎসার অভাবে ওই গ্রামের আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য দু’জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মার্চের গোড়ায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন বছর পঞ্চান্নর কানাই শবর নামে এক গ্রামবাসী। পরে তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। গত ৮ মার্চ ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে কানাইবাবুর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রক্তে সংক্রমণজনিত কারণে (সেপ্টিসিমিয়া) কানাইবাবুর মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, কিছু দিন আগে ওই গ্রামের বছর পঞ্চাশের অজিত শবরকে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মেনিনজাইটিসের উপসর্গ থাকায় তাঁকে ঝাড়গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু, অজিতবাবুকে গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান পরিজনেরা। গত ১৪ মার্চ জবলা গ্রামের বাড়িতে অজিতবাবুর মৃত্যু হয়।
দিবাকরবাবুর অভিযোগ, “অসুস্থ অজিতবাবুকে দূরবর্তী হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের জঙ্গলমহলে শবরেরা এখন ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও পাচ্ছেন না।” তৃণমূল পরিচালিত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর পাল্টা দাবি, “অজিতবাবুর পরিজনেরা গাড়ির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আমাদের সরকার শবরদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য সব রকম উদ্যোগ নিয়েছে। বরং শবর সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে। এ দিন আমিও জবলা গ্রামে গিয়েছিলাম। বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। গ্রামোন্নয়ন কমিটির সদস্যদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছি। কিন্তু এই ঘটনাটিকে রং চড়িয়ে নোংরা রাজনীতি করছে সিপিএম।” তবে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ স্বপন সরেন।