তারাদের সভার মঞ্চ বাঁধতেই হিমসিম

তিন প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মিসভা। তার মধ্যে দু’জনই আবার তারকা। বিশেষ ওই সভার মঞ্চ বাঁধতে গিয়ে সোমবার নাকাল হলেন ডেকরেটরের লোকজন। একবার বাঁশ বাধা হচ্ছে। ফের তা খোলা হচ্ছে। ডেকরেটর সংস্থার কর্মী জেলার এক তৃণমূল নেতাকে বলেই ফেললেন, “রাত ফুরোলে সভা। এতবার বাঁশ খোলা-বাঁধা করলে কাজ তুলব কী করে! মঞ্চ বাঁধতে মঙ্গলবার দুপুর গড়ালেও কিছু বলতে পারবেন না।”

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০১:১৭
Share:

সোমবার অরবিন্দ স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন পুলিশ আধিকারিকরা। —নিজস্ব চিত্র।

তিন প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনী কর্মিসভা। তার মধ্যে দু’জনই আবার তারকা। বিশেষ ওই সভার মঞ্চ বাঁধতে গিয়ে সোমবার নাকাল হলেন ডেকরেটরের লোকজন। একবার বাঁশ বাধা হচ্ছে। ফের তা খোলা হচ্ছে। ডেকরেটর সংস্থার কর্মী জেলার এক তৃণমূল নেতাকে বলেই ফেললেন, “রাত ফুরোলে সভা। এতবার বাঁশ খোলা-বাঁধা করলে কাজ তুলব কী করে! মঞ্চ বাঁধতে মঙ্গলবার দুপুর গড়ালেও কিছু বলতে পারবেন না।”

Advertisement

নামেই নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা। কিন্তু মঙ্গলবারের এই সভাই এখন শহরের যাবতীয় চর্চার কেন্দ্রে। কারণ, এই সভাতেই হাজির থাকবেন টলিউডের সুপারস্টার, ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী দেব। মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় এবং ঝাড়গ্রামের প্রার্থী উমা সরেনও থাকবেন। তবে আকর্ষণের কেন্দ্রে অবশ্যই রংবাজ।

ভিড় সামলাতে কর্মিসভা হচ্ছে মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। গোড়ায় ঠিক ছিল, মূল মঞ্চ হবে স্টেডিয়ামের প্যাভেলিয়নে। সেই মতো ডেকরেটর সংস্থাকে সব বুঝিয়ে দেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। মঞ্চ বাঁধাও শুরু হয়ে যায়। কাজ যখন শেষের দিকে, ঠিক তখনই নেতৃত্ব জানান, প্যাভেলিয়নের উপর মঞ্চ করা যাবে না। করতে হবে মাঠের এক দিকে। ডেকরেটর সংস্থার মালিক বাবলু রায়ের মাথায় তখন আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা! অগত্যা, রবিবার রাত থেকে ফের মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়। সেখানেও বিপত্তি। বাঁশ দিয়ে মঞ্চ বাধার কাজ শুরু করে ছিলেন ডেকরেটর সংস্থার কর্মীরা। সোমবার দুপুরে আবার তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, বাঁশ নয়, মঞ্চ বাধতে হবে শাল-বল্লা দিয়ে। করার কিছু নেই। শেষমেশ, দুপুরের পর থেকে বাঁশ খুলে শাল- বল্লা দিয়েই মঞ্চ বাধার কাজ শুরু হয়।

Advertisement

মঞ্চে কী রঙের কাপড় থাকবে তা নিয়ে নানা নেতার নানা মত। কেউ বলছেন, দলীয় সভা। কাপড়ের রং গেরুয়া-সাদা-সবুজ হলেই ভাল। আবার কেউ বলছেন, হোক না দলীয় সভা। মঞ্চ নীল-সাদা হলেই ভাল। ডেকরেটর সংস্থার মালিক বাবলুবাবু সোমবার সন্ধ্যায় বলছিলেন, “মঞ্চে কী রঙের কাপড় দেব, ভাবছি! তেমন হলে পিছনের দিকে গেরুয়া-সাদা-সবুজ থাকবে। আর উপরে এবং পাশে নীল-সাদা কাপড় থাকবে!”

মঞ্চ বাঁধতে এত সমস্যা কীসের? জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “আমরা ঘেরা জায়গায় কর্মিসভা করতে চেয়েছিলাম। তাই স্টেডিয়াম ভাড়া নিই। তখন মাঠের উপর ছাউনি দেওয়ার কথা ছিল না। ঠিক ছিল, প্যাভেলিয়নেই মঞ্চ হবে। পরে মাঠের উপর ছাউনি দেওয়ার কথা হয়। এই পরিস্থিতিতেই মঞ্চের জায়গা বদল করতে হয়। কারণ, কম সময়ের মধ্যে ২০ ফুট উঁচুতে ছাউনি তৈরি করা তা-ও সম্ভব। সেখানে প্যাভেলিয়নে মঞ্চ হলে ৪০ ফুট উঁচুতে ছাউনি তৈরি করতে হত।”

স্টেডিয়ামের আশপাশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে। সব মিলিয়ে ৩২টি বক্স থাকার কথা। সবই স্টেডিয়ামের ঘেরা জায়গার মধ্যে। এর মধ্যে ফোর-স্পিকারের ৪টি। ডবল- স্পিকারের ৬টি এবং সিঙ্গল স্পিকারের ২২টি। ফোর-স্পিকারের ৪টি বক্স থাকবে মঞ্চের দু’পাশে। ডবল স্পিকার বক্সগুলো থাকবে গ্যালারির সামনে। আর সিঙ্গল স্পিকারের বক্সগুলো থাকবে গ্যালারির মধ্যে। উচ্চ মাধ্যমিক এবং একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। তাই কোনও মাইক থাকবে না।

দেব আসবেন। তাই নাচ-গানের প্রস্তুতিও থাকছে। রাখা হচ্ছে দেবের অভিনীত ছবির গানের সিডি। সভায় মাইকের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিশ আলি বলেন, “কিছু সিডি থাকবে। যদি চালাতে বলেন, আমরা চালিয়ে দেবো।” জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছিলেন, “দেব তো নিজেই গাইতে পারে। সিডিতে গান চালানোর প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না।”

তিন প্রার্থীকেই ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেওয়া হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটোসাঁটো করা হচ্ছে। প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবার বিকেলে স্টেডিয়ামে আসেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। মঞ্চ- মাঠের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তিনি। কথা বলেন জেলা তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে। মঞ্চটি অবশ্য বেশি বড় হচ্ছে না। মাপ রাখা হয়েছে ৬০০ বর্গমিটার। ভিড় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। কোন গ্যালারিতে কারা বসবেন, তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে। যেমন মঞ্চের ডান দিকের গ্যালারিতে বসবেন দলের জেলা পরিষদ সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সদস্যরা। গ্যালারির দায়িত্বে থাকছেন জেলা পরিষদে তৃণমূলের দলনেতা অজিত মাইতি। অজিতবাবু বলেন, “সুষ্ঠু ভাবে যাতে কর্মসূচি হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন