নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে পালিত হল শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির দিন।
সোমবার বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর স্মরণে সকালে তমলুক পুরসভার উদ্যোগে শহরের হাসপাতাল মোড়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেন্দুবাবু বলেন, “ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম প্রতীক বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু তমলুক শহরের হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে তিনি যেভাবে বিস্ময় বালক হিসেবে এগিয়ে এসেছিলেন তার সঙ্গে তমলুকের ঐতিহ্যের গভীর সম্পর্ক আজও অমলিন হয়ে রয়েছে। আগামী প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” অনুষ্ঠানে শুভেন্দবাবু শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতিতে তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলে একটি সংগ্রহশালা গড়ার কথা ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, হ্যামিল্টন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ক্ষুদিরাম বসুর ব্যবহার্য অনেক জিনিস রক্ষণাবেক্ষণ করে রেখেছেন। এইসব সামগ্রীকে সুন্দর করে সংরক্ষিত করে তাঁর স্মৃতিতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য ৩৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে ওই সংগ্রহশালা গড়ে তুলে তা সকলের জন্য উৎসর্গ করা হবে। এ দিন তমলুক হাসপাতাল মোড়ে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক ও তমলুক-শ্রীরামপুর সড়কের সংযোগস্থলে শহিদ ক্ষুদিরামের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে মাল্যদান করেন শুভেন্দবাবু। ছিলেন তমলুকের পুরপ্রধান দেবিকা মাইতি, উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতি সহ পুরসভার কাউন্সিলররা।
ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে বাংলার বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, “আমরা অবিভক্ত মেদিনীপুরের অধিবাসী হিসেবে বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত বিদ্যাসাগরের জন্য গর্ব অনুভব করি। শহিদ ক্ষুদিরাম বসু, শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরা, দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, বিপ্লবী সতীশচন্দ্র সামন্ত, অজয় মুখোপাধ্যায়, সুশীল ধাড়ারা ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের নিদর্শন রেখে গিয়েছেন তাঁকে আগামী দিনে ধরে রাখতে হবে।” আগামী বছর থেকে এই দিনে হ্যামিল্টন হাইস্কুলের অনুমতি নিয়ে সেখান থেকে একটি সুসজ্জিত শোভাযাত্রা সহকারে রক্ষিতবাটী হয়ে তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে এসে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করা হবে বলেও জানান তিনি। রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ক্ষুদিরাম বসুর নাম সন্ত্রাসবাদী হিসেবে উল্লেখ থাকার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দুবাবু বলেন, “শহিদ ক্ষুদিরাম বসুকে এইভাবে উল্লেখ করার সঙ্গে আমি একমত নই। রাজ্যের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।”
এ দিন বিকেলে কাঁথিতে শহিদ ক্ষুদিরাম স্মৃতিরক্ষা সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শুভেন্দুবাবু বলেন, “বতর্মানে অবক্ষয়ের সমাজে যখন সবর্ত্র আমিত্ব, একনায়কতন্ত্র, পুঁজিবাদের আধিপত্য, সম্প্রীতি, সৌভ্রাতৃত্ব, অখণ্ডতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে, তখন ক্ষুদিরাম বসুর আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ নিয়ে চর্চা, আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।” কেশপুরের মোহবনিতে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস পালন করা হল। এই এলাকাতেই রয়েছে ক্ষুদিরামের জন্মভিটে।