তরুণী পরিচারিকার রহস্য-মৃত্যু, ক্ষোভ

তরুণী পরিচারিকার অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ায়। মঙ্গলবার সকালে শহরের তাঁতিগেড়িয়া টাউন কলোনির বাসিন্দা ভরত খাঁর বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীদের দাবি, বাড়ির মালিক ভরতবাবু ঘটনার কথা না জানার ভান করেন। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, এক কোণে পদ্মা মুর্মু (২০) নামে ওই পরিচারিকার অগ্নিদগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪০
Share:

ভরত খাঁর বাড়ির সামনে স্থানীয়দের বিক্ষোভ।

তরুণী পরিচারিকার অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল মেদিনীপুরের তাঁতিগেড়িয়ায়। মঙ্গলবার সকালে শহরের তাঁতিগেড়িয়া টাউন কলোনির বাসিন্দা ভরত খাঁর বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীদের দাবি, বাড়ির মালিক ভরতবাবু ঘটনার কথা না জানার ভান করেন। ছাদে গিয়ে দেখা যায়, এক কোণে পদ্মা মুর্মু (২০) নামে ওই পরিচারিকার অগ্নিদগ্ধ দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁতিগেড়িয়া এলাকায় বহু পরিচারিকার বাস। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ির মালিকের গ্রেফতারের দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বাড়ির লোক না আসা পর্যন্ত মৃতদেহ বাড়ির বাইরে বের করতে অনেকে বাধা দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ।

Advertisement

মৃতার পরিবারের অভিযোগ, পদ্মাকে খুন করে দেহে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ভরতবাবু । তাঁর দাবি, তরুণী পরিচারিকা নিজেই গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিঅ্যান্ডটি) শ্যামল মণ্ডল জানান, তদন্তে ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পরিচারিকার মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে সব মহল থেকেই। সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতির জেলা সম্পাদিকা জয়শ্রী চক্রবর্তী বলেন, “ঘটনাটি মর্মান্তিক। ঘটনার সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” তাঁর অভিযোগ, “পরিচারিকাদের সামাজিক সুরক্ষা বলে কিছু নেই। মেদিনীপুর শহরে প্রচুর পরিচারিকা রয়েছেন। পরিচারিকাদের হেনস্তা করার অভিযোগ মাঝে-মধ্যেই আমরা পাই। পুলিশ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করুক।” এ দিন কোতয়ালি থানায় সমিতির পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়।

Advertisement


পদ্মা মুর্মু।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁতিগেড়িয়া টাউন কলোনির নারকেলবাগান এলাকায় স্ত্রী, ছেলে, বৌমা, দুই নাতি-নাতনি নিয়ে থাকেন ভরতবাবু। মঙ্গলবার বাড়িতে ভরতবাবু ও তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ ছিলেন না। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ তাঁদের বাড়ির ছাদ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে প্রতিবেশীরা ভরতবাবুকে খবর দেন। প্রতিবেশীদের দাবি, ছাদের এক কোণে পড়ে থাকতে দেখা যায় পদ্মার অগ্নিদগ্ধ দেহ। এরপরই প্রতিবেশীদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে ভরতবাবুকে মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। বাড়ির কিছু জিনিসপত্রও ভাঙচুর করেন তাঁরা। খবর পেয়ে সকাল ন’টা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। আসেন ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিঅ্যান্ডট্)ি শ্যামল মণ্ডল, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ।

শহরের তাঁতিগেড়িয়া এলাকায় বহু পরিচারিকা বসবাস করেন। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা ভরতবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে বাড়ির সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সকাল ১১টা নাগাদ মৃতদেহ মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ই ফেরেন ভরতবাবুর ছেলে সমীর খা।ঁ বিক্ষোভের জেরে বাড়ির মালিক ও তাঁর ছেলে সমীরকে মোটরবাইকে করে ঘুরপথে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের দু’জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই তরুণী পরিচারিকার বাড়ি শালবনি থানার মৌপালে। তাঁর বাবা- মা মারা গিয়েছেন। অভিভাবক বলতে রয়েছেন দাদা সুশীল মুর্মু। ঘটনার কথা জানতে পেরে পরিচারিকার বাড়িতে গিয়ে সুশীলের সঙ্গে কথা বলেন শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জয় সাহা। সুশীলের কথায়, “বছর খানেক ধরে বোন কাজের জন্য শহরে থাকে। মাস পাঁচেক আগে এক বার বাড়িতে এসেছিল। সকালে পিঁড়াকাটা ফাঁড়ির পুলিশ এসে জানায়, আগুনে পুড়ে বোন মারা গিয়েছে।” ওই যুবকের অভিযোগ, “বোন গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবে কেন? ওরাই বোনকে মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে।” সুশীলের আরও অভিযোগ, “বাড়িতে মাসে দেড় হাজার টাকা করে পাঠানোর কথা ছিল। উনি (মালিক) তাও দিতেন না। দু’বার দু’হাজার করে, এক বার তিন হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন।” এ দিন কোতয়ালি থানায় গিয়ে সুশীল বোনকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনার পর ভরতবাবু দাবি করেন, পদ্মা বাড়ি যেতে চাইলেও তাঁরা যেতে না দেওয়ায় রাগ থেকেই পরিচারিকা আত্মহত্যা করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এক আত্মীয় মারফৎ ওই পরিচারিকার খোঁজ পেয়েছিলেন ভরতবাবু। এ দিন সকালে পদ্মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, পরে অশোকনগরের অদূর থেকে তাঁকে ফের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর ভরতবাবু দাবি করেন, পদ্মা বাড়ি যেতে চাইলেও তাঁরা বাড়ি যেতে দিচ্ছিলেন না। এই রাগ থেকেই পরিচারিকা আত্মহত্যা করেন। যদিও প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, কেন সকালে কাউকে না জানিয়ে পদ্মা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কেনই বা তড়িঘড়ি তাঁকে অশোকনগরের অদূর থেকে ফের বাড়ি নিয়ে আসা হল। তদন্তে নেমে এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

ভরতবাবুর প্রতিবেশী সীমা রায় বলছিলেন, “এলাকায় এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছু বুঝতে পারছি না।” তবে সুশীলের অভিযোগ, “বোনকে খুনই করা হয়েছে। ওই বাড়ির লোকজন সব জানেন। আমরা বিচার চাই।” কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল এই যুবকের।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন