খেলতে নেমে নাকে রুমাল

দুর্গন্ধে নরক স্টেডিয়াম

এ যেন আতঙ্কের পূব দিক! দুর্গন্ধে মাঠে টেকা দায়। দমবন্ধ পরিস্থিতিতেই চলছে খেলা। দুর্ভোগের এই ছবি খোদ মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট, ফুটবল বা অ্যাথলেটিক্স, ভোগান্তির অন্ত নেই।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২২
Share:

নাক বন্ধ করেই খেলছে খুদেরা। ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এ যেন আতঙ্কের পূব দিক!

Advertisement

দুর্গন্ধে মাঠে টেকা দায়। দমবন্ধ পরিস্থিতিতেই চলছে খেলা। দুর্ভোগের এই ছবি খোদ মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট, ফুটবল বা অ্যাথলেটিক্স, ভোগান্তির অন্ত নেই।

কারণটা কী? স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকে রয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। সেখানে লাশের স্তূপ জমলেই ছড়ায় দূষণ। সুগন্ধী তেল স্প্রে করেও বাগে আনা যায় না দুর্গন্ধ। অগত্যা নাকে রুমাল চেপেই চলে খেলা।

Advertisement

সপ্তাহ কয়েক আগে সিএবি- র মহিলা ক্রিকেটের আসর বসেছিল স্টেডিয়ামে। সে দিন মাঠে নেমেছিল ভিন্ জেলার দুই দল। শুরু থেকেই দুর্গন্ধে মাঠে টিকতে পারছিলেন না খেলোয়াড়রা। ঘনঘন নাকে রুমাল চাপা দিচ্ছিলেন ফিল্ডাররা। সব দেখে নিজের অসন্তোষ গোপন করেননি সিএবি-র পর্যবেক্ষক তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার কেয়া রায়। পাশের চেয়ারে বসে থাকা মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মালকে তিনি বলেছিলেন, “এত দুর্গন্ধে মাঠে খেলোয়াড়রা থাকতে পারে? এ বার একটু দেখুন! মেদিনীপুরে এটা তো বড় সমস্যা!” বিনয়বাবু তাঁকে জানান, “অনেক দিন ধরেই এই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছি। হাসপাতালে চিঠিও দিয়েছি। তবে সুরাহা হয়নি! দেখছি আর কী করা যায়!”

স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকেই রয়েছে প্রাকটিস পিচ। আর এই পূর্ব দিকের গ্যালারি ঘেঁষেই রয়েছে মর্গ। সমস্যা যে চরম, তা মানছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মাল। তিনি বলেন, “পাশে মর্গ থাকার জন্য খুব সমস্যা হয়। ওই দিকের প্র্যাকটিস এরিয়াতে খেলতে গেলে খেলোয়াড়রা অসুবিধেয় পড়ে।’’ তাঁর কথায়, “যে দিন লাশ কাটা ঘরের দরজা খোলা হয়, সে দিন যা তা অবস্থা হয়।”

দিন কয়েক আগেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার যুগল করের সঙ্গে দেখা করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ তাপস দে। তাপসবাবুও সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সুপারের কাছে আর্জি জানান। সুপার যুগল করের আশ্বাস, “মর্গের পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়ে গেলে আর এই সমস্যা থাকবে না।”

জেলার সব থেকে বড় হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে পর্যাপ্ত চেম্বার নেই। ফলে মৃতদেহ রাখা নিয়ে সমস্যা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে মর্গের নতুন ভবন গড়ে ওঠে। দুর্গন্ধ এড়াতে মৃতদেহ রাখার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বার বসানো হয়। এখন মর্গে ২টি ‘কুলার’ রয়েছে। এক- একটি ‘কুলার’-এ ৬টি করে চেম্বার রয়েছে। সাধারণত, একটি চেম্বারে একটি মৃতদেহই থাকার কথা। অবশ্য অনেক সময় একটি চেম্বারে দু’টি মৃতদেহ রাখা হয়। কিন্তু মেদিনীপুরে এর থেকেও বেশি মৃতদেহ আসে।

হাসপাতালের এক সূত্রে খবর, গড়ে প্রতিদিন ৪ ৫টি দেহ ময়না-তদন্তের জন্য আসে। অশনাক্ত দেহগুলো রয়েই যায়। মাসে গড়ে ২০- ২৫টি দেহ থেকে যায়। সেই সব দেহ পোড়ানোর জন্য ঠিকাদার রয়েছে। তারা মাসে একবার দেহ নিয়ে গিয়ে পোড়ান। এই থেকে যাওয়া দেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দেহগুলো সঙ্গে সঙ্গে দাহ করাও যায় না। একটা নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরই দাহ করতে হয়।

হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “যে জায়গা রয়েছে, তার থেকে বেশি সংখ্যক মৃতদেহ থাকলে সমস্যা তো হবেই। পুলিশ অশনাক্ত দেহগুলো মেদিনীপুরে পাঠায়। তা পড়ে থাকলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দেহ তো অন্য হাসপাতালের মর্গেও রাখা যেতে পারে। পুলিশ তা করে না!” হাসপাতালের ওই কর্তার কথায়, “মর্গের সম্প্রসারণ হলে সমস্যা মিটতে পারে। আরও ৮টি ‘কুলার’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা কার্যকর হলে ৬০টি দেহ রাখা যাবে। তখন আর সমস্যা হবে না।”

এখন মর্গে যে দু’টি ‘কুলার’ রয়েছে, তার একটি আবার দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। সচল রয়েছে মাত্র একটি ‘কুলার’। ফলে, সঙ্কট আরও বেড়েছে। ওই কর্তার কথায়, “স্টেডিয়ামে খেলা থাকলে মর্গের পাশে ইউক্যালিপটাস তেল ছড়ানো হয়। এটা সুগন্ধী তেল। এই তেলে দুর্গন্ধ কিছুটা ঢাকা পড়ে। তবে সব সময় তো তেল ছড়ানো সম্ভব নয়। তেলের দামও কম নয়। এক বোতল তেলের দাম ১২০০- ১৩০০ টাকা। এখন রোগী কল্যাণ সমিতির ফান্ডে বেশি টাকাও নেই!”

মেদিনীপুরের অনুর্ধ্ব ১৪ জেলা ক্রিকেট দলের কোচ সুমিতা দাস বলছেন, “মাঠের পূর্বদিকে মর্গ থাকায় মাঝে-মধ্যেই সমস্যা হয়। প্র্যাকটিস কিংবা ম্যাচ চলাকালীন ঘনঘন নাকে রুমাল চাপা দিতে হলে তো সমস্যা হবেই। খেলোয়াড়রাও বিরক্ত হয়।” তাঁর কথায়, “সপ্তাহ কয়েক আগে সিএবি-র মহিলা ক্রিকেট হল এখানে। অন্য জেলার দলগুলো এসেছিল। দুর্গন্ধে খেলোয়াড়দের সমস্যায় পড়তে হয়েছে দেখে খারাপই লেগেছে। জানি না কবে এই সমস্যার সমাধান হবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন