মেদিনীপুর পুরসভার সার্ধশতবর্ষ

দায়সারা আয়োজন, তাল কাটল শুরুতেই

মঞ্চে অতিথিদের ভিড়। অথচ নীচে সার সার চেয়ার ফাঁকা। একটা সময় অতিথিদের দেওয়ার জন্যও স্মারকও কম পড়ল। মঞ্চ থেকে পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীণ কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, “সারা বছর অনুষ্ঠান চলবে। যাঁদের হাতে স্মারক পৌঁছয়নি, আমরা পরে অন্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের হাতে স্মারক তুলে দেবো!”

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩২
Share:

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলাকালীন ফাঁকাই রইল দর্শকাসন। (ইনসেটে) দৌড় প্রতিযোগিতার সূচনা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মঞ্চে অতিথিদের ভিড়। অথচ নীচে সার সার চেয়ার ফাঁকা।

Advertisement

একটা সময় অতিথিদের দেওয়ার জন্যও স্মারকও কম পড়ল। মঞ্চ থেকে পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীণ কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, “সারা বছর অনুষ্ঠান চলবে। যাঁদের হাতে স্মারক পৌঁছয়নি, আমরা পরে অন্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের হাতে স্মারক তুলে দেবো!”

শহর জুড়ে প্রচারের অন্ত ছিল না। টাঙানো হয়েছিল মস্ত মস্ত হোর্ডিং। তারপরেও মেদিনীপুর পুরসভার সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনের অনুষ্ঠান শুরুটা হল এমনই ছন্নছাড়া ভাবে। রবিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে মেদিনীপুরের দেড়শো বছরের ইতিহাসও সামনে আনতে পারলেন না পুর-কর্তৃপক্ষ! শুধু জানানো হল, সার্ধশতবর্ষেই মূল্যবান তথ্য সম্বলিত স্মারক পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছে রয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।

Advertisement

সার্ধশতবর্ষের অনুষ্ঠানের এই হাল কেন? পুর-কর্তৃপক্ষের সাফাই, এটা সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান! অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করতে হয়েছে! তাই সবটা গুছিয়ে ওঠা যায়নি! এক কাউন্সিলরের আবার যুক্তি, “উদ্বোধনে দশ মাইল দৌড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ দিকে, শীত তো চলে যাচ্ছে। এরপর আর দৌড় করা সম্ভব নয়। তাই তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানটা করতে হয়েছে!”

বাস্তবে অবশ্য অনেকটাই সময় পেয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কারণ, সার্ধশতবর্ষ পালনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা হল বেশ দেরিতে। মেদিনীপুর পুরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। গত ১ এপ্রিল পুরসভা দেড়শো বছরে পা দিয়েছে। কিন্তু তখন লোকসভা ভোটের আবহে নিঃশব্দেই পেরিয়ে গিয়েছে ঐতিহাসিক দিনটি। তাই পরে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো একটি কমিটিও গড়া হয়। তারপর দেখতে দেখতে আরও আট মাস পেরিয়েছে। তা-ও কেন সবটা গুছিয়ে ওঠা গেল না, প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসী। শহরের প্রবীণ নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক চপল ভট্টাচার্য বলছেন, “দেড়শো বছর উদযাপন। এটা সত্যিই শহরের গৌরবের ব্যাপার। পুরসভার সার্ধশতবর্ষের সূচনাটা আরও ভাল ভাবে করা যেত। আশা করি, আগামী দিনে পুর-কর্তৃপক্ষ কিছু পরিকল্পনা করবেন।”

এ দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য কেউ ছিলেনও না। আসেননি কোনও মন্ত্রী, সাংসদ ছিলেন না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুরসভার এক কর্তা বলেন, “আমরা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কেউই সময় দেননি!”

রবিবার সকালে পুরভবনে কাছ থেকেই দশ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিযোগী ছিলেন ৭০ জন। পুরসভারই এক কাউন্সিলর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত মাসে এক ক্লাবের উদ্যোগে শহরে দশ মাইল দৌড় হয়েছে। সেখানে প্রতিযোগী ছিলেন প্রায় ১২০ জন। এ দিনও শহরের অন্যত্র পাঁচ মাইল দৌড় হয়েছে। প্রতিযোগী ছিলেন প্রায় ৩৫০ জন। ওই কাউন্সিলর মানছেন, “আসলে প্রচারটা ঠিক মতো হয়নি! না হলে অন্তত শতাধিক প্রতিযোগী হত!”

“দেড়শো বছর উদযাপন শহরের গৌরবের ব্যাপার। সার্ধশতবর্ষের সূচনাটা আরও ভাল ভাবে করা যেত।
আশা করি, আগামী দিনে পুর-কর্তৃপক্ষ কিছু পরিকল্পনা করবেন।” —চপল ভট্টাচার্য। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।

পুরসভার সামনেই বাঁধা হয়েছিল মঞ্চ। দৌড় শুরুর কিছু পরে সেখানে শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শুরু থেকেই ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি, রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন উন্নয়ন নিগমের সভাপতি দীনেন রায়, জেলা পরিকল্পনা কমিটির সহ-সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ। পরে আসেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। এ দিনই সার্ধশতবর্ষ ভবনের শিলান্যাস করেন মৃগেনবাবু। পুরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইটের উদ্বোধন হয়। দৌড় প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হয়। সন্ধ্যায় ছিল বিচিত্রানুষ্ঠান এবং আতসবাজির প্রদর্শনী।

এমনিতেই পুর-পরিষেবা নিয়ে শহরবাসীর অনুযোগের অন্ত নেই। নিকাশি, পানীয় জল, পথবাতি, রাস্তাঘাট— সব নিয়েই রয়েছে অভিযোগ। এ দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলাশাসক মনে করিয়ে দেন, “মানুষের জন্যই পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজন। আশা করি, আগামী দিনে এই পুরসভা আরও ভাল ভাবে কাজ করবে। মেদিনীপুর শহরকে আরও উন্নত করবে।” জেলা সভাধিপতি উত্তরাদেবীকেও বলতে শোনা যায়, “পুরসভাকে মানুষের আরও কাছে, আরও অন্তরে পৌঁছে দিতে হবে। সব সুন্দর ভাবে সাজাতে হবে!” বিধায়ক মৃগেনবাবু ইতিহাসের সূত্র ধরে বলেন, “এই শহর ঐতিহাসিক শহর। মেদিনীপুর শহরেই জন্মেছিলেন অনেক মনীষী। এই শহরেই অত্যাচারী ইংরেজ জেলাশাসকেরা খুন হয়েছিলেন।” অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ এবং কাবেরী চট্টোপাধ্যায়। নির্মলবাবু আবার বলেন, “বাংলার মানুষের কাছে এই পুরসভার ঐতিহ্যকে পৌঁছে দিতে হবে।”

সার্ধশতবর্ষের কর্মসূচি যে আগামী এক বছর ধরে চলবে, তা এ দিন মঞ্চ থেকেই বারবার জানিয়েছেন পুরপ্রধান প্রণব বসু। কী কী হবে তা-ও জানিয়েছেন উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস। তাঁর কথায়, “ওয়ার্ড-ভিত্তিক ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট হবে। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। গুণীজন সংবর্ধনা হবে। পুরসভার দেড়শো বছরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা সভা হতে পারে।”

এই সব ঘোষণার বাইরে রবিবাসরীয় অনুষ্ঠানের তাল কিন্তু বারবারই কেটেছে। সেটা বুঝেছেন পুর-কর্তৃপক্ষও। তাই তাঁরা বারবার বলছেন, “সার্ধশতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠানটা জাঁকজমক করেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন